এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি অপরা একাদশীর মাহাত্ম্য (Apara Ekadashi Importance), সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত, সংকল্প মন্ত্র, পারণ মন্ত্র।
সেই সঙ্গে বিশেষভাবে আলোচনা করেছি অপরা একাদশী ব্রত (Apara Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?
অপরা একাদশী ব্রত (Apara Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?
“অপরা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়।”
অপরা একাদশী (Apara Ekadashi) – সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত
যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।
দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।
❏ ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১৫ মে ২০২৩ সোমবার অপরা একাদশী।
❏ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৩১ বৈশাখ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
ভোরে স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।
পারণ : অপরা একাদশীর পরদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে।
❏ সকাল ০৭:১৩ থেকে ০৯:৪১ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, বাংলাদেশ সময় এবং
❏ সকাল ০৬:৪৩ থেকে ০৯:২২ মিনিটের মধ্যে কলকাতা, ভারতীয় সময়।
ভোরে স্নান সেরে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের নিকট অবশ্যই অর্পণ করবেন, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।
অপরা একাদশী (Apara Ekadashi) – সংকল্প মন্ত্র
একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে আমরা অবশ্যই সংকল্প নেব –
একাদশ্যাম্ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্ মে ভবাচ্যুত।।
অনুবাদ : হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।
অপরা একাদশী (Apara Ekadashi) – পারন মন্ত্র
একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে।
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ —
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥
—- (বৃ: না: পু: ২১/২০)
অনুবাদ : হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।
এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে
আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
অপরা একাদশীর মাহাত্ম্য কথা
মহারাজ যুধিষ্ঠির শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন, “হে জনার্দন! জ্যৈষ্ঠ মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম কি এবং তার মাহাত্ম্যই বা কি, আমি শুনতে ইচ্ছা করি। আপনি অনুগ্রহ করে তা বর্ণনা করুন।”
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ মানুষের কল্যানের উদ্দেশ্যে অমৃতসম কথাগুলি যুধিষ্ঠিরকে শোনালেন, “হে মহারাজ! মানুষের মঙ্গলের জন্য আপনি খুব ভাল প্রশ্ন করেছেন। বহু পুণ্য প্রদানকারী, মহাপাপ বিনাশকারী, ও পুত্রদানকারী এই একাদশী ‘অপরা’ নামে খ্যাত।
এই ব্রত পালনকারী ব্যক্তি জগতে প্রসিদ্ধি লাভ করে। ব্রহ্মহত্যা, গোহত্যা, ভ্রূণহত্যা, পরনিন্দা, পরস্ত্রীগমন, মিথ্যাভাষণ প্রভৃতি গুরুতর পাপ এই ব্রত পালনে নষ্ট হয়ে যায়। যারা মিথ্যাসাক্ষ্যদান দেয়, ওজন ও মাপকাঠিতে ছলনা করে, শাস্ত্রের মিথ্যা ব্যাখ্যা প্রদান করে, জ্যোতিষের মিথ্যা গণনা করে, চিকিৎসার নামে কুচিকিৎসা বা অর্থ হরন করে থাকে, তারা সকলেই নরকযন্ত্রণা ভোগ করে। যদি এসমস্ত ব্যক্তিরাও যদি এই ব্রত পালন করে, তবে তারা সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয়।
ক্ষত্রিয় যদি স্বধর্ম ত্যাগ করে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে যায়, তবে সে ঘোরতর নরকগামী হয়। কিন্তু সেও এই ব্রত পালনে মুক্ত হয়ে স্বর্গগতি লাভ করে।
মকররাশিতে সূর্য অবস্থানকালে মাঘ মাসে প্রয়াগ স্নানে যে ফল লাভ হয়; শিবরাত্রিতে কাশীধামে উপবাস করলে যে পুণ্য হয়; গয়াধামে বিষ্ণুপাদপদ্মে পিন্ডদানে যে ফল পাওয়া যায়; সিংহরাশিতে বৃহস্পতির অবস্থানে গৌতম নদীতে স্নানে, কুম্ভে কেদারনাথ দর্শনে, বদরিকাশ্রম যাত্রায় ও বদ্রীনারায়ণ সেবায় যে পুণ্য হয়; সূর্যগ্রহণে কুরুক্ষেত্রে স্নানে, হাতি, ঘোড়া, স্বর্ণ দানে এবং দক্ষিণাসহ যজ্ঞ সম্পাদনে যে ফল লাভ হয়, এই ব্রত পালন করলে অনায়াসে সেই ফল লাভ হয়ে থাকে।
এই অপরা ব্রত হল পাপরূপ বৃক্ষের কুঠার স্বরূপ, পাপরূপ কাষ্ঠের দাবাগ্নির মতো, পাপরূপ অন্ধকারে সূর্যসদৃশ এবং পাপহস্তির সিংহস্বরূপ। এই ব্রত পালন না করে যে ব্যক্তি জীবন ধারণ করে জলে বুদবুদের মতো তাদের জন্ম-মৃত্যুই কেবল সার হয়। অপরা একাদশীতে উপবাস করে বিষ্ণুপূজা করলে সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে গতি হয়। এই ব্রতকাথা পাঠ ও শ্রবণ করলে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়। ব্রহ্মান্ডপুরণে এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে।
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। _____শ্রীল প্রভুপাদ!
► আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
You must be logged in to post a comment.