✤Vijaya Ekadashi✸বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤1

✤Vijaya Ekadashi✸বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤

1 min


219
188 shares, 219 points

ফাল্গুন মাসের মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল বিজয়া একাদশী(Vijaya Ekadashi)। প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদকে বলেছেন ━ হে নারদ! বিজয়া একাদশী ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে শ্রীরামচন্দ্র বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে তিনি অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবে, তাদের এ জগতে জয়লাভ ও পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে। হে যুধিষ্ঠির, এই কারনে এই ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য।

সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Vijaya Ekadashi), বিজয়া একাদশী সংকল্প, বিজয়া একাদশী পারণ, বিজয়া একাদশী ব্রত কথা

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤Vijaya Ekadashi✸বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤3

✤✸ বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤

(Significance of Vijaya Ekadashi)

কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

🕉️ ১) প্রজাপতি ব্রহ্মা দেবর্ষি নারদকে বলেছেন ━ হে নারদ! বিজয়া একাদশী ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে শ্রীরামচন্দ্র বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে তিনি অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবে, তাদের এ জগতে জয়লাভ ও পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে। হে যুধিষ্ঠির, এই কারনে এই ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য।

🕉️ ২) এই ব্রতে যারা শ্রদ্ধাশীল, তাঁরাই ধন্য। তাঁদের জন্ম সার্থক, এতে কোনো সন্দেহ নেই।

 

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ বিজয়া একাদশী সংকল্প ✸✤

(Vijaya Ekadashi Saṅkalpa)

✡ যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

✡ দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

✡ পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে বিজয়া একাদশী ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 07-মার্চ-2024 (বৃহস্পতিবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২৩শে ফাল্গুন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই  সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️

❝ একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ বিজয়া একাদশী পারণ ✸✤

(Vijaya Ekadashi Pārana)

বিজয়া একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ 08-মার্চ-2024 (শুক্রবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━

পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 05:51 – 09:48
বাংলাদেশ : সকাল 06:13 – 10:10

অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।

◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️

❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤Vijaya Ekadashi✸বিজয়া একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤2

✤✸ বিজয়া একাদশী ব্রত কথা ✸✤

(Vijaya Ekadashi Vrat Kathā)

ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া বিজয়া একাদশীব্রত মাহাত্ম্য স্কন্দপুরাণে  বর্ণিত আছে।

যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে বললেন,হে বাসুদেব! হে মধুসূদন! ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর মাহাত্ম্য অনুগ্রহ করে আমাকে সবিস্তারে বর্ণনা করুন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন ━ হে কৌন্তেয়! এই একাদশী বিজয়া নামে পরিচিত। এই একাদশী ব্রত কথা ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে প্রথম দেবর্ষি নারদ স্বয়ম্ভূ ব্রহ্মার থেকে জ্ঞানলাভ করেছিলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে যা বলেছিলেন, তা আমি তোমাকে বলছি। এই পবিত্র পাপবিনাশকারী ব্রত মানুষকে জয় দান করে বলে এই একাদশীর নাম বিজয়া।” 

◼️ শ্রীরামচন্দ্রের লঙ্কাজয়ের কাহিনী ◼️

ত্রেতাযুগে শ্রীরামচন্দ্র ১৪ বছরের জন্য বনে গিয়েছিলেন। সীতা লক্ষ্মণের সঙ্গে তিনি পঞ্চবটী বনে বাস করতেন। সেইসময় লঙ্কাপতি রাবণ সীতা দেবীকে হরণ করেন। সীতার অনুসন্ধানে রামচন্দ্র চতুর্দিক ভ্রমণ করতে থাকেন। তখন মৃতপ্রায় জটায়ুর সাথে তাঁর সাক্ষাৎ হয়। জটায়ু অন্তিমকালে রাবণের সীতাহরণের সমস্ত ঘটনা রামচন্দ্রকে জানিয়ে মৃত্যুবরণ করল। এর পর সীতামাতাকে উদ্ধারের জন্য অগ্রসর হলে বানররাজ সুগ্রীবকে বালির হাত থেকে রক্ষা করে তাকে সিংহাসন ফিরিয়ে দেন, ফলে সুগ্রীবরাজ প্রভু রামের দাসত্ব স্বীকার করে বিশাল সেনাসহ লঙ্কার দিকে অগ্রসর হয়।

ভগবান রামচন্দ্রের কৃপায় হনুমান এক লাফে সমুদ্র পাড়ি দিয়ে লঙ্কায় উপস্থিত হয়। সেখানে বন্দি যমরাজকে মুক্ত করেন। অত্যাচারে জর্জরিত উল্টো করে ঝোলানো শনিদেবকে উদ্ধার করেন। তাছাড়া বন্দী ইন্দ্রদেব, বরুণদেবের মতো সমস্ত দেবতাদের করুণ অবস্থা দেখে ব্যাথিত হন। এরপর অশোক বনে সীতাদেবীকে দর্শন করে শ্রীরামচন্দ্র প্রদত্ত আংটি তাঁকে অর্পণ করেন। সীতামাতা হনুমানের সাথে ফিরতে অস্বীকার করেন কারন, তিনি তাঁর স্বামী রামচন্দ্রের সাথে ফিরতে চান। ফিরে আসার আগে লঙ্কাকাণ্ড (অর্থাৎ লঙ্কা পুড়িয়ে ছারখার করে দেওয়া) ঘটিয়ে রাবনের দর্প চূর্ণ করে দেন।   

ফিরে এসে শ্রীরামচন্দ্রের কাছে লঙ্কার সমস্ত ঘটনা ব্যাখ্যা করেন। হনুমানের কথা শুনে রামচন্দ্র সুগ্রীবের পরামর্শে সমুদ্রতীরে যান। সেই দুস্তর সমুদ্র দেখে তিনি লক্ষ্মণকে বললেন ━ হে লক্ষ্মণ! কিভাবে এই অগাধ সমুদ্র পার হওয়া যায়, তার কোনো উপায় খুঁজে পাচ্ছিনা।

উত্তরে লক্ষ্মণ বললেন ━ হে পুরুষোত্তম! সর্বজ্ঞাতা আদিদেব আপনি, আপনাকে আমি কি উপদেশ করব? তবে বক্দালভ্য নামে এক মুনি এই দ্বীপে বাস করেন এবং এখান থেকে চার মাইল দূরে তাঁর আশ্রম। হে রঘুপতি রাঘব! আপনি সেই প্রাচীন ঋষিশ্রেষ্ঠকে এর উপায় জিজ্ঞাসা করুন, তিনি নিশ্চয় এর উপায় বলে দেবেন।

লক্ষ্মণের মনোরম কথা শুনে তারা সেই মহামুনি বক্দালভ্যের আশ্রমে উপনীত হলেন এবং ভগবান রামচন্দ্র সেই মুনিকে ভক্তি সহকারে প্রণাম করলেন। মুনিবর শ্রীরামচন্দ্রকে পুরাণ পুরুষ রূপে চিনতে পারলেন এবং তিনি সশরীরে আশ্রমে উপস্থিত ভেবেই আনন্দে ভরে উঠল মহামুনির হৃদয়। তিনি বিনীতভাবে জিজ্ঞাসা করলেন ━ হে প্রভু রামচন্দ্র! কি কারনে আপনি আমার শরণাপন্ন হয়েছেন কৃপা করে আমাকে বলুন। কীভাবে আপনাকে সাহায্য করতে পারি?

শ্রীরামচন্দ্র বললেন ━ হে মুনিবর! আপনার কৃপায় সৈন্যসহ আমি এই সমুদ্রতীরে উপস্থিত হয়েছি। রাক্ষসরাজের লঙ্কাবিজয় করে আমার পত্নি সীতাকে উদ্ধার করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। যাতে এই ভয়ঙ্কর সমুদ্র উত্তীর্ণ হতে পারি, তার উপায় জানবার জন্য আমরা আপনার কৃপা প্রার্থনা করি।

মুনিবর প্রসন্ন চিত্তে পদ্মলোচন ভগবান রামচন্দ্রকে বললেন ━ হে প্রভু শ্রীরামচন্দ্র! আপনার অভীষ্ট সিদ্ধির জন্য যে শ্রেষ্ঠ ব্রত করণীয়, তা বলছি মন দিয়ে শ্রবণ করুন। ফাল্গুন মাসের কৃষ্ণপক্ষের বিজয়া নামক একাদশী পালনের সুফল প্রাপ্তি হিসাবে আপনি নিশ্চয়ই সৈন্যসহ সমুদ্র পার হতে পারবেন। বিজয় লাভের জন্য দশমীর দিন সোনা, রূপা, তামা অথবা মাটির কলস সংগ্রহ করে তাতে জল ও আমপাতা দিয়ে সুগন্ধিচন্দনে সাজিয়ে তার উপর সোনার নারায়ণ মূর্তি স্থাপন করবেন। একাদশীর দিন যথাবিধি প্রাতঃস্নান করে কলসের গলায় মালাচন্দন পরিয়ে উপযুক্ত স্থানে নারকেল ও গুবাক (=সুপারি) দিয়ে পূজা করবেন। এরপর গন্ধ,পুষ্প, তুলসী, ধূপ-দীপ নৈবেদ্য ইত্যাদি দিয়ে পরম ভক্তি সহকারে নারায়ণের পূজা করে হরিকথা কীর্তনে সমস্ত দিন যাপন করবেন। রাত্রি জাগরণ করে অখন্ড ঘি দিয়ে প্রদীপ প্রজ্জ্বলিত রাখবেন। দ্বাদশীর দিন সূর্যোদয়ের পর সেই কলস বিসর্জনের জন্য কোন নদী, সরোবর বা জলাশয়ের কাছে বিধি অনুসারে পূজা নিবেদনের পর তা বিসর্জন দেবেন। তারপর ঐ মূর্তি বেদজ্ঞ ব্রাহ্মনকে দান করবেন এই ব্রত প্রভাবে নিশ্চয় আপনার বিজয় লাভ হবে।

প্রজাপতি ব্রহ্মা বললেন ━ হে নারদ! ঋষির কথামত ব্রত অনুষ্ঠানের ফলে শ্রীরামচন্দ্র বিজয়ী হয়েছিলেন। সীতাপ্রাপ্তি, লঙ্কাজয়, রাবণবধের মাধ্যমে তিনি অতুল কীর্তি লাভ করেছিলেন। তাই যথাবিধি যে মানুষ এই ব্রত পালন করবে, তাদের এ জগতে জয়লাভ ও পরজগতে অক্ষয় সুখ সুনিশ্চিত জানবে। হে যুধিষ্ঠির, এই কারনে এই ব্রত পালন অবশ্য কর্তব্য।

🌸 জয় বিজয়া একাদশী 🌸

        🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান
===========================

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত (প্রনাম)
=================

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

x


Like it? Share with your friends!

219
188 shares, 219 points

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]