শঙ্খ কি এবং শঙ্খ কেন বাজানো হয় শঙ্খ কেন তিনবার বাজানো হয়_1

শঙ্খ কি এবং শঙ্খ কেন বাজানো হয়? শঙ্খ কেন তিনবার বাজানো হয়?

1 min


234
203 shares, 234 points

শঙ্খ কি এবং শঙ্খ কেন বাজানো হয়?

■ শঙ্খ কি?

শঙ্খ হল এক প্রজাতির সামুদ্রিক শামুক। এটি একটি অমেরুদন্ডী জগতের মোলাস্কা বা শামুক পর্বের প্রাণী। এর বৈজ্ঞানিক নাম Turbinella pyrumতুর্বিনেল্লা পায়রাম“। 

শঙ্খ শব্দটির উৎপত্তি দুটি সংস্কৃত শব্দ ‘শাম’‘খাম’ থেকে। ‘শাম’ শব্দের অর্থ হল শুভ বা পবিত্র এবং ‘খাম’ শব্দের অর্থ হল জল। এই দুই শব্দের মিলনে সৃষ্টি হয়েছে ‘শঙ্খম’ শব্দটি, যার অর্থ পবিত্র জলশঙ্খ শুধু ধর্মীয় নয়, বাস্তু ও স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।

হিন্দু ধর্মে নিত্যপূজা থেকে শুরু করে পূজা-পার্বণ, ভাইফোঁটা, মুখে ভাত, বিবাহ প্রভৃতি শুভ অনুষ্ঠানে সনাতন ধর্মের রীতি অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন রীতিনীতি ও বিশেষ কিছু উপাচার ব্যবহৃত হয়, তবে এর মধ্যে শঙ্খ অন্যতম। প্রতিদিন তুলসীতলায়, ভগবানের সম্মুখে শঙ্খ বা শাঁখ বাজানোর প্রচলন রয়েছে। এটি শুধু হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা নয়, বৌদ্ধ, জৈন প্রভৃতি ধর্মাবলম্বীরা পূজার উপাচার হিসাবে ব্যবহার করেন।

প্রধানত ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরে শঙ্খ পাওয়া যায়, সেই তুলনায় আরব সাগরে কম পাওয়া যায়। হিন্দু সংস্কৃতির সাথে শঙ্খ ওতপ্রোতভাবে জড়িত, রামায়ন কিংবা মহাভারত কালে এর প্রমান পাওয়া যায়।    

হরপ্পা ও মহেঞ্জোদারো সভ্যতা খননের সময় বিভিন্ন কারুকার্য সমন্বিত শঙ্খশিল্পের নিদর্শন পাওয়া গেছে।

■ হিন্দু ধর্মমতানুসারে শঙ্খের স্থান 

শঙ্খ হল পবিত্র এবং সনাতন ধর্মে শঙ্খকে ভগবান বিষ্ণুর প্রতীক রূপে গণ্য করা হয়। আবার শঙ্খকে বিষ্ণুর অর্ধাঙ্গী হিসেবেও পূজো করা হয়। এটা বিশ্বাস করা হয় যে, শঙ্খ হল সমুদ্র মন্থন থেকে প্রাপ্ত চৌদ্দটি রত্নের মধ্যে একটি। অন্যদিকে শঙ্খ হল ধনসম্পদ ও প্রতিপত্তির দেবী মাতা লক্ষীর মর্যাদার প্রতীক। “ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণ” মতে, শঙ্খ হল ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর অধিষ্ঠানকারী মন্দির।

মহাভারত ও পুরাণে শঙ্খের শক্তি ও অলৌকিকতা বর্ণনা করা হয়েছে। শঙ্খকে বিজয়, সমৃদ্ধি, সুখ, শান্তি, খ্যাতি, ভাগ্য এবং লক্ষ্মীর প্রতীক মনে করা হয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল শঙ্খ ওম শব্দের প্রতীক। শঙ্খের ধ্বনি শুভ বলে মনে করা হয়। যদিও প্রাকৃতিকভাবে অনেক ধরনের শঙ্খ রয়েছে, এদের মধ্যে তিনটি প্রধান প্রকার: দক্ষিণাবর্তী শঙ্খ, মধ্যবর্তী শঙ্খ এবং বামাবর্তী শঙ্খ

■ পূজো-অর্চনায় শঙ্খের ব্যবহার

ভগবানের আরতির জন্য দুই ধরণের শঙ্খ ব্যবহার করা হয়। বামাবর্তী শঙ্খ পূজোর পূর্বে ও শেষে শঙ্খধ্বনি দিতে এবং দক্ষিনাবর্তী শঙ্খ পূজোর সামগ্রী হিসেবে ব্যবহৃত হয়। দক্ষিনাবর্তী শঙ্খ নারায়ণের হাতে ব্যবহৃত শঙ্খ হিসাবে গণ্য করা হয়। তাই এই শঙ্খকে সৌভাগ্যের প্রতীক রূপে মান্য করা হয়। কিন্তু পূজোর আগে বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত শঙ্খ কখনোই পূজোর সামগ্রী হিসেবে ব্যবহার করা উচিৎ নয়। “বরাহপুরাণ”-এ স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, কখনোই মন্দিরের প্রধান দরজা (দ্বার) শঙ্খ ধ্বনি না দিয়ে খোলা উচিৎ নয়।  বাজানোর জন্যে ব্যবহৃত হয়।

বিশেষত শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খ পূজাঅর্চনায় ব্যবহারে নিষিদ্ধ, তাই এগুলোকে টোটকা বা কালো জাদু (“অঘোরী বিদ্যা” বলা হয়) কিংবা অপদেবতার আরাধনায় ব্যবহার করা হয়।

■ শঙ্খের ব্যবহারর্থে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়

ক) যে শঙ্খ শঙ্খধ্বনি দিতে ব্যবহার করা হয়, তা কখনোই পূজোর শঙ্খ হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না।

খ) শঙ্খ বাজাবার পর সেটা ধুয়ে রাখতে হবে এবং শঙ্খ ধোওয়া জল কখনোই ভগবান বা তার পার্ষদদের অর্চনা বা অন্য কোনও কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

গ) আবার পূজোর কাজে ব্যবহৃত শঙ্খ কখনোই শঙ্খধ্বনি দেবার কাজে ব্যবহার করা যাবে না।

ঘ) নিত্যপূজো চলাকালীন কোনোক্ষেত্রেই শিব লিঙ্গকে শঙ্খ দিয়ে স্পর্শ করা যাবে না।

ঙ) দেবাদিদেব মহাদেব এবং সূর্যদেবের স্নানের জন্য কখনোই শঙ্খ ব্যবহার করা চলবে না।

■ শঙ্খ কেন বাজানো হয়? শঙ্খের ধর্মীয় এবং বৈজ্ঞানিক উপকারিতা

১) ওম ধ্বনি উৎপাদক

ভাগবত পুরাণেও শঙ্খের উল্লেখ আছে। শঙ্খের মধ্যে ওম ধ্বনি অনুরণিত হয়, তাই শঙ্খকে ওম ধ্বনি উৎপাদক বলা হয়।। ওম থেকে বেদ গঠিত হয়েছে এবং বেদ থেকে জ্ঞান ছড়িয়েছে।

২) তিন ধরণের শক্তির নির্গমন

একবার শঙ্খ বাজালে যে ধ্বনি উৎপন্ন হয় তা থেকে তিন ধরণের শক্তি নির্গত হয়।

● একটি হল “চৈতন্য”। এই শক্তি বৃত্তাকারে শাঁখের খোলোসের মধ্যভাগ হতে চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

● আরেকটি হল “ধ্যান” যা তির্যক সরলরৈখিক পথে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে।

● আর সর্বশেষ শক্তিটি হল “আনন্দ” যেটা ক্রমান্বয়ে শঙ্খের মধ্যভাগ হতে ধীরে ধীরে সবার অন্তরে ছড়িয়ে পড়ে।

ঘরে শঙ্খ রেখে ফুঁ দিলেও বাস্তু দোষ দূর হয়। এটি ভারতীয় সংস্কৃতির একটি অনন্য ঐতিহ্য। শ্রীকৃষ্ণের ছিল পাঞ্চজন্য, অর্জুনের ছিল দেবদত্ত, যুধিষ্ঠিরের ছিল অনন্ত বিজয়, ভীষ্মের ছিল পৌণ্ড্র, নকুলের ছিল সুঘোষ, সহদেবের ছিল মণিপুষ্পক নামক শঙ্খ। একেকটি শঙ্খের গুরুত্ব ও শক্তি ছিল একেক রকম।

৩) সত্যবাদ তরঙ্গের শক্তি বৃদ্ধি ঘটায়

প্রকৃতিতে প্রধানত তিন ধরণের শক্তি তরঙ্গ থাকে। এই তরঙ্গগুলোর দ্বারাই সমগ্র জগতের সৃষ্টি। এগুলি হল “সত্যবাদ তরঙ্গ”, “রাজসিক (অহঙ্কার অর্থে) তরঙ্গ” এবং “তামসিক (দুষ্প্রবৃত্তি) তরঙ্গ”। এই প্রতিটি তরঙ্গের মধ্যে পাঁচ ধরণের মহাজাগতিক উপাদান থাকে, যথা “ভূমি”, “জল”, “আগুন”, “বায়ু” এবং “ইথার”।

এই পাঁচটি উপাদানের ভিত্তিতে সত্যবাদ, রাজসিক এবং তমসিক তরঙ্গের সংখ্যা যথাক্রমে ১৫০ টি, ২০০ টি এবং ১৫০ টি (সত্যবাদ তরঙ্গের বিপরীত অনুক্রমে বণ্টিত)। রাজসিক আর তামসিক তরঙ্গদ্বয় সত্যবাদ তরঙ্গকে মন্দিরের পরিবেশে প্রবেশে বাধা দেয়। শঙ্খধ্বনি রাজসিক এবং তামসিক তরঙ্গদ্বয়কে প্রতিহত করে সত্যবাদ তরঙ্গকে প্রবেশ করায় ফলে মন্দিরের পরিবেশ পবিত্র হয়, সকল উদ্ভিদ প্রানবন্ত হয় এবং মানুষের মনের সব অহংবোধ, জড়তা, আঁধার কেটে পবিত্র হয়।

আবার শঙ্খনী জাতীয় শঙ্খে খাঁজগুলো অসম ভাবে বণ্টিত থাকে, যার দরুন এই শঙ্খ বাজালে সত্যবাদ তরঙ্গের ক্ষমতা বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং রাজসিক ও তমসিক তরঙ্গের তরঙ্গ দৈর্ঘ্য কমে গিয়ে কম্পাঙ্ক বেড়ে যায়, অর্থাৎ তীব্রতা বাড়ে।

৪) সুখ ও সমৃদ্ধির বৃদ্ধি

পুরাণ ও ভিন্ন শাস্ত্র মতে ঘরে শঙ্খ রাখলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। এর ফলে প্রতিটি কর্মক্ষেত্রে শ্রীবৃদ্ধি ঘটে এবং গৃহে সুখ-সমৃদ্ধি বৃদ্ধি পায়। কথিত আছে শঙ্খ ফুঁকলেও ব্যবসা বাড়ে। শঙ্খ আনে সুনাম, দীর্ঘায়ু আর যশ; দূর করে সকল পাপ ও ক্লেশ।

৫) নেতিবাচক শক্তির অপসারণ

শঙ্খ বাজানোর ফলে ঘরের মধ্যে থাকা নেতিবাচক শক্তি (নেগেটিভ এনার্জি) দূরীভূত করে। সুতরাং যেসব বাড়িতে শঙ্খ বাজানো হয়, সেখানে কখনোই কোনো নেতিবাচকতা থাকে না।

ঘরে শঙ্খের খোলে জল রেখে সেই জল সকাল সন্ধ্যে ঘরে ছিটিয়ে দিলে নেতিবাচক শক্তি অপসারিত হয় এবং ইতিবাচক শক্তি (পজিটিভ এনার্জি) সৃষ্টি হয়।

৬) সম্মান-খ্যাতি ও সম্পর্কের মধুরতার বৃদ্ধি

বিশ্বাস অনুসারে, শঙ্খ সবসময় গৃহের দক্ষিণ দিকে রাখা উচিত। এতে করে ব্যাক্তির সম্মান ও খ্যাতি বৃদ্ধি পায়।

আবার, শঙ্খটিকে শুধুমাত্র গৃহের দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে রাখলে ঝগড়া, বিবাদ, একই জিনিস নিয়ে বারবার মন খারাপ প্রভৃতি দূরীভূত হয়। সেই সাথে পারিবারিক সম্পর্কের মাধুর্যতা বাড়ে।

৭) জীবাণু ধ্বংস করে

যজুর্বেদ এবং আধুনিক বিজ্ঞানের সুপরিচিত বিজ্ঞানী ডক্টর জগদীশ চন্দ্র বসুর মতে, শঙ্খ থেকে উৎপন্ন কম্পন যে তরঙ্গের সৃষ্টি করে তা বাতাসের সাথে মিশে থাকা জীবাণুকে ধ্বংস করে। এতে পরিবেশ বিশুদ্ধ হয়। ১৯২৮ সালে, বার্লিন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা শঙ্খের শব্দ নিয়ে গবেষণা করেছিলেন এবং এটি প্রমাণ করেছিলেন।

তাছাড়া বিজ্ঞানীরা মনে করেন, সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি শঙ্খের প্রভাবে বাধাপ্রাপ্ত হয়।

৮) স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়

নিয়মিত শঙ্খ বাজালে, বাদকের মস্তিষ্কের গোড়ার সুষুম্না কাণ্ড সতেজ থাকে, রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পায় এবং রাজসিক ও তমসিক তরঙ্গের অন্তর্গত তেজ ও বায়ুর উপাদানগুলো সাম্যাবস্থায় থাকে। ফলে স্মৃতিশক্তিও বাড়ে।

৯) পেটে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি

শঙ্খ বাজানোর মাধ্যমে বাদকের মলদ্বারের পেশী সংকুচিত ও প্রসারিত হয়। এর ফলে শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ব্যায়াম হয় এবং গ্যাসের সমস্যা দূর হয়।

১০) মানসিক চাপ দূর হয়

প্রতিদিন শঙ্খ ফুঁকলে মস্তিষ্কে রক্ত ​​সঞ্চালন সঠিকভাবে হয় এবং এর ফলে মানসিক চাপ দূর হয়। যারা বেশি মানসিক চাপে থাকেন, তারা অবশ্যই শঙ্খ ফুঁকবেন। তাছাড়াও শঙ্খ ফুঁক দিলে মানসিক ব্যাধি দূর হয়। 

১১) পরিপাকতন্ত্র, দাঁত, হাড় শক্ত করে ও দৃষ্টিশক্তি উজ্জ্বল রাখে

আয়ূর্বেদ চিকিৎসা ব্যবস্থায় শঙ্খচূর্ণ একটি মহৎ ওষুধ হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। শঙ্খ চূর্ণ প্রাকৃতিকভাবে ক্যালসিয়াম, সালফার এবং ফসফরাস সমৃদ্ধ যা পেটের পীড়া দূর করে পরিপাকতন্ত্রকে সচল রাখে। একই কারনে শঙ্খের খোসায় রাখা জল খেলে হাড় মজবুত হয়, দাঁত সুস্থ রাখে এবং দৃষ্টিশক্তি উজ্জ্বল রাখতেও উপকারী।

১২) চর্মরোগ সারাতে

শঙ্খের শতভাগ ক্যালসিয়াম আছে। রাতে একটি শঙ্খের খোসা জলে ভরে সকালে ত্বকে ম্যাসাজ করুন। এতে চর্মরোগ সেরে যাবে।

১৩) হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমায়

শঙ্খ ফুঁকলে যোগের তিনটি কাজ একই সাথে হয়। কুম্ভক, রেচক ও প্রাণায়াম। যে ব্যক্তি নিয়মিত শঙ্খ ফুঁকেন তার হৃৎপেশী শক্তিশালী হয় ফলে তাদের হার্ট অ্যাটাকের সম্ভবনা নেই বললেই চলে।

১৪) অন্ত্রের রোগনিরাময়ক

শঙ্খের সাথে আরও কিছু প্রাকৃতিক উপাদানের সমাহারে তৈরী বড়ি “শঙ্খবতী” যা “ডিসপেপসিয়া” নামক অন্ত্রের রোগের চিকিৎসায় ফলদায়ক। এটি বাত, পিত্ত দমন এবং সৌন্দর্য ও শক্তি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।

সারারাত শঙ্খ জলে রেখে সকালে খালি পেটে তিন চামচ জল পান করলে কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি  ও পিত্ত দমন হয়।

১৫) বলিরেখা অপসারণ

শঙ্খ ফুঁকলে মুখের বলিরেখার সমস্যা দূর হয়। আসলে, শঙ্খ বাজানোর ফলে মুখের পেশীগুলি প্রসারিত হয়, যার কারণে সূক্ষ্ম রেখাগুলি দূর হয়। শাঁখায় রাখা জল পান করলে ব্রণ, দাগ, কালচে দাগ দূর হতে শুরু করে।

১৬) শ্বাসকষ্ট দূর করে

শঙ্খে ফুঁক মুখ, শ্বাসতন্ত্র তথা ফুসফুসের জন্য একটি দুর্দান্ত ব্যায়াম। শঙ্খ ফুঁকলে ফুসফুস প্রসারিত হয়, যার ফলে হাঁপানি এবং শ্বাসকষ্টের রোগগুলি মূল থেকে নির্মূল হয়।

১৭) বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের ব্যায়াম সাধিত করে

শঙ্খ বাজানোর ফলে আমাদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ও তন্ত্রের ব্যায়াম সাধিত হয়। সুতরাং, প্রতিদিন শঙ্খ ফুঁক দিলে মলদ্বারের পেশী শক্তিশালী হয়। শঙ্খ বাজানোর ফলে মূত্রনালী, মূত্রাশয়, তলপেট, মধ্যচ্ছদা, বুক ও ঘাড়ের পেশীগুলির জন্য অত্যন্ত কার্যকরী হয়।

যারা প্রতিদিন শঙ্খ বাজায় তাদের শ্বাসতন্ত্র ও স্বরতন্ত্রের ব্যায়াম হয়। তাদের গলা, স্বরযন্ত্রের সমস্যা ও ফুসফুসের রোগ হয় না। থাইরয়েড গ্রন্থির ব্যায়ামের ফলে কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।

১৮) মুক্ত উৎপাদনে

প্রাকৃতিকভাবে কিছু কিছু শঙ্খ মুক্তা তৈরী করে। বর্তমানে কৃত্তিম উপায়ে শঙ্খের মধ্যে মুক্ত উৎপাদন করে তা ব্যাসায়িক কাজে লাগিয়ে অর্থ উপার্জন করা হয়। 

শঙ্খ কি এবং শঙ্খ কেন বাজানো হয় শঙ্খ কেন তিনবার বাজানো হয়_2

শঙ্খ কেন তিনবার বাজানো হয় ?

শঙ্খ কিন্তু তিনবার বাজানো হয়। তিনবারের বেশি বাজানো হয় না। কিন্তু জানেন কি, শঙ্খ কেন তিনবার বাজানো হয় ? ৩ বারের বেশি কেন বাজানো হয় না ?

মন্দিরে করা আরতি হোক বা কোনও ধর্মীয় অনুষ্ঠান, শঙ্খ বাজানো অত্যন্ত শুভ বলে মনে করা হয়। বিশ্বাস অনুসারে, তিনবার শঙ্খ বাজিয়ে সমস্ত পূজার কাজ শুরু হয়। এটি বিশ্বাস করা হয় যে এটি পরিবেশ থেকে সমস্ত ধরণের অশুভ শক্তিকে ধ্বংস করে এবং সমস্ত ধরণের নেতিবাচক শক্তিকেও দূর করে। হিন্দু বিশ্বাস অনুসারে, যে ব্যক্তি পূজার সময় শঙ্খ ফুঁকে, তার ফলে ভগবান তার সব ইচ্ছা পূরণ করেন।

হিন্দু সংস্কৃতির সঙ্গে শঙ্খের যোগ আজকের নয়। সেই কোন প্রাচীন কাল থেকে পুজো-অর্চনার কাজে লেগে আসছে এই প্রাকৃতিক উপাদানটি। শাস্ত্র মতে নিত্য পুজোর পরে যদি নিয়ম করে তিনবার শঙ্খ বাজানো যায়, তাহলে গৃহস্থের অন্দরে অশুভ শক্তির প্রভাব কমতে থাকে এবং শুভ শক্তির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। ফলে কোনও খারাপ ঘটনা ঘটার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি ভাগ্যও ফিরে যায়। ফলে জীবন সুখ -শান্তিতে এবং আনন্দে ভরে উঠতে সময় লাগে না। শঙ্খ কিন্ত ৩ বার বাজানো হয়।

■ শঙ্খের শব্দে ঈশ্বর আকৃষ্ট হন

শাস্ত্রে বলা হয় বাড়িতে শঙ্খ তিনবার বাজানো উচিত। তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজানো উচিত নয়। এর কারণ হিসেবে শাস্ত্রে বলা হয় যে, ৩ বার শঙ্খ বাজালে ব্রহ্মা, বিষ্ণু মহেশ্বর এই তিন দেবতার সাথে সমস্ত দেবদেবীরা আমন্ত্রিত হন। কিন্তু তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজালে দেব-দেবীর পাশাপাশি দানব বা অসুরদের নিমন্ত্রণ পাঠানো হয়।

হিন্দু ধর্ম শাস্ত্রানুসারে, সমুদ্র মন্থনের সময় অসুররা চারবার শঙ্খধ্বনি করে “বলি অসুর” কে নিমন্ত্রণ পাঠিয়ে জাগ্ৰত করেছিল। তাই, তিনবারের বেশি শঙ্খ বাজালে সৃষ্টি (ব্রহ্মা), স্থিতি (বিষ্ণু) ও বিনাশের (মহেশ্বর) দেবতাদের পাশাপাশি আসুরিক শক্তিও নিমন্ত্রণ পেয়ে আপনার গৃহে প্রবেশ করে। ভগবান বিষ্ণু ও দেবতাদের পাশাপাশি অসুরকে নিমন্ত্রণের ফল স্বরূপ আপনার ও আপনার পরিবারের উপর নেমে আসতে পারে এইসব দেবতাদের অভিশাপ। তাই শাস্ত্রে তিনবার করেই শঙ্খ বাজানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।


Like it? Share with your friends!

234
203 shares, 234 points

Join Our Community List

Community grow with You. * VERIFY & CONFIRM YOUR EMAIL *

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Fill the Correct Information.

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]