✤Papmochani Ekadashi✸পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প,পারণ✤1

✤Papmochani Ekadashi✸পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প,পারণ✤

1 min


218
187 shares, 218 points

চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল পাপমোচনী একাদশী (Papmochani Ekadashi)। যে ব্যাক্তি নিষ্ঠাসহকারে পাপমোচনী একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ নিষ্ঠাসহকারে এই একাদশী পালন করলে শ্রীহরির কৃপায় তাঁর সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং বিষ্ণুলোকে গতি হ‌য়ে থাকে। তাছাড়া, যে ব্যাক্তি এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণ করেন তিনি সহস্র গোদানের ফল লাভ করেন। 

সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Papmochani Ekadashi), পাপমোচনী একাদশী সংকল্প, পাপমোচনী একাদশী পারণ, পাপমোচনী একাদশী ব্রত কথা

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤Papmochani Ekadashi✸পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প,পারণ✤2

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤

(Significance of Papmochani Ekadashi)

কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে। 

🕉️ ১) যে ব্যাক্তি নিষ্ঠাসহকারে পাপমোচনী একাদশী ব্রত পালন করেন তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। অর্থাৎ নিষ্ঠাসহকারে এই একাদশী পালন করলে শ্রীহরির কৃপায় তাঁর সকল পাপ বিনষ্ট হয় এবং বিষ্ণুলোকে গতি হ‌য়ে থাকে।

🕉️ ২) যে ব্যাক্তি এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণ করেন তিনি সহস্র গোদানের ফল লাভ করেন।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপমোচনী একাদশী সংকল্প ✸✤

(Papmochani Ekadashi Saṅkalpa)

✡ যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

✡ দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

✡ পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে পাপমোচনী একাদশী ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 05-এপ্রিল-2024 (শুক্রবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২শে চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই  সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে শুক্রবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️

❝ একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপমোচনী একাদশী পারণ ✸✤

(Papmochani Ekadashi Pārana)

পাপমোচনী একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ 06-এপ্রিল-2024 (শনিবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━

পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 05:23 – 09:33
বাংলাদেশ : সকাল 05:45 – 09:55

অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।

◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️

❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ পাপমোচনী একাদশী ব্রত কথা ✸✤

(Papmochani Ekadashi Vrat Kathā)

চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া ব্রত হল পাপমোচনী একাদশী

যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করলেন― হে অচ্যুত! হে ভক্তবতসর! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, এই একাদশীর মাহাত্ম্যই বা কি কৃপা করে আমায় বলুন। আমি তা জানতে অতি উৎসাহী।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যময় মুখে তৃপ্ত হাসি, বললেন― হে ধর্মরাজ যুধিষ্ঠির! আপনি ধর্মবিষয়ক প্রশ্ন করেছেন। এই একাদশী সকল সুখের আধার, সিদ্ধি প্রদানকারী ও পরম মঙ্গলময়। সমস্ত পাপ থেকে নিস্তার বা মোচন করে বলে এই পবিত্র একাদশী তিথি পাপমোচনী নামে জগত প্রসিদ্ধ। রাজা মান্ধাতা একবার লোমশ মুনিকে এই একাদশীর কথা জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তাঁর বর্ণিত সেই বিচিত্র উপাখ্যানটি আপনার কাছে বলছি। আপনি মনযোগ দিয়ে শ্রবণ করুন।

✤Papmochani Ekadashi✸পাপমোচনী একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প,পারণ✤3

◼️ ঋষিকুমার মেধাবী ও অপ্সরা মঞ্জ ুঘোষার কাহিনী ◼️

প্রাচীনকালে স্নিগ্ধ অতি মনোরম চৈত্ররথ পুষ্প উদ্যানে মুনিগণ বহু বছর ধরে তপস্যা করতেন। একসময় মেধাবী নামে এক ঋষিকুমার সেখানে তপস্যা করছিলেন। মঞ্জ ুঘোষা নামে এক সুন্দরী অপ্সরা তার মোহে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে, তাই সে মেধাবীকে বশীভূত করতে চাইল। কিন্তু ঋষির অভিশাপের ভয়ে সে আশ্রম থেকে দুই মাইল দূরে বাস করে লাগল। বীণা বাজিয়ে মধুর স্বরে সে গান করে মেধাবীকে আকর্ষিত করতে চাইত।

একদিন মেধাবী ঋষি গানের উৎস খুঁজতে খুঁজতে মঞ্জ ুঘোষার কাছে পৌঁছায়। অপ্সরা মেধাবীকে দেখামাত্র কামবাণে পীড়িতা হয়ে পড়ে। এদিকে ঋষি মেধাবীও অপ্সরার অনুপম সৌন্দর্য দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। তখন সেই অপ্সরা মুনিকে নানা ছলা-কলা মোহ দ্বারা বশীভূত করে। ক্রমে কামপরবশ হয়ে মুনি সাধন-ভজন বিসর্জন দিয়ে তার আরাধ্য দেব ও তার লক্ষ্য থেকে দূরে সরে যান। এইভাবে অপ্সরার সাথে কামক্রীড়ায় মুনির বহু বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল।

মেধাবী ঋষিকে আচার-ভ্রষ্ট হতে দেখে সেই অপ্সরা দেবলোকে ফিরে যেতে মনস্থির করল। একদিন সুযোগ বুঝে মঞ্জ ুঘোষা মেধাবী মুনিকে অনুরোধ করল― হে প্রভু! অনেক দিন অতিবাহিত হয়েছে এখন আমি নিজ গৃহে ফিরতে ইচ্ছুক। আপনি আমাকে নিজ গৃহে ফিরে যাবার অনুমতি প্রদান করুন।

কিন্তু মেধাবী ঋষি তখনও অপ্সরার মোহে মোহাচ্ছন্ন। তিনি প্রত্যুত্তরে বললেন― হে সুন্দরী! এখন ত সবে সন্ধ্যাকাল! এই মাত্র তুমি আমার কাছে এসেছ, প্রাতঃকাল পর্যন্ত আমার কাছে থেকে যাও।

অভিশাপ ভয়ে মুনির কথা শোনা ছাড়া অপ্সরার আর কোনও উপায় রইল না। আরও কয়েক বছর সে ঋষির সাথে বাস করল। এইভাবে বহু বছর (৫৫ বছর ৯ মাস ৭ দিন) অতিবাহিত হল। দীর্ঘকাল অপ্সরার সান্নিধ্যে থাকলেও মেধাবীর কাছে তা অর্ধরাত্রি বলে মনে হল।

এরপর একদিন মঞ্জ ুঘোষা পুনরায় নিজ গৃহে ফিরে যেতে চেয়ে প্রার্থনা জানালে ঋষি জানান― হে সুন্দরী! এখন সবে প্রাতঃকাল, যতক্ষণ পর্যন্ত আমি সন্ধ্যাবন্দনা না সমাপ্ত করি, ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি এখানে থাক।

মেধাবী ঋষির এই কথা শুনে ঈষৎ হেসে মঞ্জ ুঘোষা অবগত করালেন― হে মুনিবর! আমার সহবাসে আপনার যে কত বৎসর অতিবাহিত হয়েছে, তা একবার বিবেচনা করে দেখুন। এই কথা শুনে মেধাবী স্থির হয়ে দিব্যচিন্তা করে দেখলেন যে, তার জীবনের  ছাপ্পান্ন বৎসর অতিবাহিত হয়ে গেছে এবং সে আরাধ্য দেবকে এই সময়কালে ভুলে গেছে। সে পথভ্রষ্ট হয়েছে কেবল এই নারীর জন্য।

মোহমুক্ত হয়ে মেধাবী তখন মঞ্জ ুঘোষার প্রতি ক্রোধ পরবশ হয়ে অভিশাপ দিলেন― ওরে পাপিষ্ঠা, দুরাচারিণী, তপস্যার ক্ষয়কারিনী, তোমাকে ধিক্! তোমার সৌন্দর্য নষ্ট হোক, তুমি পিশাচী হও। মেধাবীর অভিশাপে অপ্সরার শরীর বিকারগ্রস্ত হল। তখন সে ঋষির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে অবনতমস্তকে শাপমোচনের উপায় জিজ্ঞাসা করল।

ঋষি মেধাবীর মন বিগলিত হল এবং শাপমুক্তির উপায় বলে দিলেন ―হে সুন্দরী! চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী, সর্বপাপ ক্ষয়কারিণী। সেই ব্রত পালনে তোমার পিশাচত্ব দূর হবে।

পিতার আশ্রমে ফিরে অনুতপ্ত মেধাবী আকুতি জানালেন ―হে পিতা! এক অপ্সরার সঙ্গদোষে আমি পথভ্রষ্ট হয়ে মহাপাপ করেছি, এর প্রায়শ্চিত্তের উপায় কি? তা কৃপা করে আমায় বলুন।

উত্তরে চ্যবন মুনি অভয় দিয়ে বললেন ― চৈত্র মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া পাপমোচনী একাদশী ব্রতের প্রভাবে তোমার সমস্ত পাপ দূরীভূত হবে। পিতার উপদেশ মতো মেধাবী ঋষি সেই ব্রত পরম ভক্তি ও নিষ্ঠা সহকারে পালন করল। ব্রতের পুণ্যফলে তার সমস্ত পাপ ভস্মীভূত হল এবং তিনি পুনরায় তপস্যার ফল লাভ করল। মঞ্জ ুঘোষাও ঐ ব্রত পালনের সুকৃতির ফলে পিশাচত্ব থেকে মুক্ত হয়ে দিব্য দেহে স্বর্গে গমন করল।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুধিষ্ঠির মহারাজের মাধ্যমে সকলের উদ্দেশ্যে বললেন― হে রাজন! এই পাপমোচনী একাদশী যে ব্যাক্তি নিষ্ঠাসহকারে পালন করেন তাদের পূর্বকৃত সমস্ত পাপ ক্ষয় প্রাপ্ত হয়। তাছাড়াও এই ব্রতকথা পাঠ ও শ্রবণে সহস্র গোদানের ফল লাভ হয়

🌸 জয় পাপমোচনী একাদশী 🌸

🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান
===========================

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত (প্রনাম)
=================

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

x


Like it? Share with your friends!

218
187 shares, 218 points

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]