✤ Rama Ekadashi✸ রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤1

✤ Rama Ekadashi✸ রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤

1 min


213
182 shares, 213 points

কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশী হল রমা একাদশী(Rama Ekadashi)এই রমা একাদশী মহাপাপনাশিনী। অর্থাৎ বিধি অনুসারে রমা একাদশী ব্রত পালনে সর্বপাপক্ষয় হয় এবং সুখ ও সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটে। শুধু তাই নয়, যে ব্যাক্তি রমা একাদশী ব্রত শ্রবণ করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে পূজিত হন।

সেই সঙ্গে আমাদের জানা দরকার রমা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Rama Ekadashi), রমা একাদশী সংকল্প, রমা একাদশী পারণ, রমা একাদশী ব্রত কথা

সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✸✤

একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।

একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।

১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──

১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।

আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করিনি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।

বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?

১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)

২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন। ──(পদ্মপুরাণ)

৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)

৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।

৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।

৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)

৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।

৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)

৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)

১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)

১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)

১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)

১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)

তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

 ─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ রমা একাদশী মাহাত্ম্য ✸✤

(Significance of Rama Ekadashi)

ব্রতশ্রেষ্ঠ একাদশী শ্রীহরির অত‍্যন্ত প্রিয়। কৃষ্ণভর্তি লাভই শ্রী একাদশী ব্রতের মুখ্য ফল। তবে আনুষাঙ্গিকরূপে স্বর্গ, ঐশ্বর্যাদি অনিত্য ফল লাভ হয়ে থাকে।

🕉️ ১) রমা একাদশী মহাপাপনাশিনী। অর্থাৎ বিধি অনুসারে রমা একাদশী ব্রত পালনে সর্বপাপক্ষয় হয় এবং সুখ ও সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটে।

🕉️ ২) যে ব্যাক্তি রমা একাদশী ব্রত শ্রবণ করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে পূজিত হন।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤ Rama Ekadashi✸ রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤3

✤✸ রমা একাদশী সংকল্প ✸✤

(Rama Ekadashi Saṅkalpa)

✡ যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

✡ দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

✡ পরদিন অর্থাৎ একাদশী তিথিতে সম্পূর্ণ দিন পালিত হবে রমা একাদশী ━

ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 28-অক্টোবর-2024 (সোমবার)
বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ১১ই কার্ত্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মনে রাখবেন, একাদশীর দিন ভোরে (অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) শয্যা ত্যাগ করে স্নান সেরে শুচিশুদ্ধ হয়ে শ্রীহরির মঙ্গল আরতিতে অংশগ্রহণ করতে হয়। শ্রীহরির পাদপদ্মে প্রার্থনা করতে হয়, হে শ্রীকৃষ্ণ, আজ যেন এই মঙ্গলময়ী পবিত্র একাদশী সুন্দরভাবে পালন করতে পারি, আপনি আমাকে কৃপা করুন।ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সম্মুখে অবশ্যই সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করে সংকল্প নিতে হয়। সুতরাং এক্ষেত্রে সোমবার ভোরে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করতে হবে।

◼️ একাদশী সংকল্প মন্ত্র ◼️

❝ একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤✸ রমা একাদশী পারণ ✸✤

(Rama Ekadashi Pārana)

রমা একাদশীর ঠিক রদিন অর্থাৎ 29-অক্টোবর-2024 (মঙ্গলবার) সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে ━

পশ্চিমবঙ্গ : সকাল 05:40 – 09:26
বাংলাদেশ : সকাল 06:02 – 09:48

অর্থাৎ একাদশী ব্রত পালন করে পরের দিন ভোরে স্নান সেরে পারন সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে তিনবার ভক্তিসহকারে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের সম্মুখে ভক্তিসহকারে অবশ্যই অর্পণ করতে হয়, এরপর সেই অনুকল্প প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ অর্থাৎ একাদশী ব্রত ভঙ্গ করতে হয়, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যেতে হয়।

◼️ একাদশী পারন মন্ত্র ◼️

❝ ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥ ❞

━━┉┈┈(৩ বার)

অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

✤ Rama Ekadashi✸ রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ সময়✤2

✤✸ রমা একাদশী ব্রত কথা ✸✤

(Rama Ekadashi Vrat Kathā)

কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশীব্রত মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে যুধিষ্ঠির-শ্রীকৃষ্ণ সংবাদে বর্ণিত আছে।

কার্ত্তিক মাসে যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করলেন ━ হে অচ্যুত! হে পরমেশ্বর! কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, এই ব্রতের মাহাত্ম্য কি, ব্রত পালন বিধিই বা কি, এবং পূজ্যদেবতা কে সেই বিষয়ে আমার কৌতূহল নিবারণ করুন।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যময় মুখে প্রসন্নতা বিকশিত হল এবং তিনি বলতে লাগলেন ━ হে সার্বভৌম! হে জ্যৈষ্ঠকৌন্তেয়! মহাপাপনাশিনী এই একাদশী ‘রমা’ নামে প্রসিদ্ধ। এখন আমি এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, আপনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।

◼️ রাজকুমার শোভন ও পত্নী চন্দ্রভাগার কাহিনী ◼️

অতীতে মুচুকুন্দ নামে এক সুপ্রসিদ্ধ তেজস্বী রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম, বরুণ ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। ভক্তশ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও তার অত্যন্ত সদ্ভাব ছিল। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্ত ও সত্যপতিজ্ঞ। ধর্ম অনুসারে তিনি রাজ্যশাসন করতেন।চন্দ্রভাগা নামে তার এক সুশ্রী কন্যা ছিল। চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।

বিয়ে পরবর্তীতে শোভন একদিন শ্বশুর বাড়িতে আসে এবং দৈবক্রমে সেইদিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতিপরায়ণা চন্দ্রভাগা বেশ চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল ━হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল, তিনি ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারেন না। এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে রাজ্যে ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, একাদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ। আমি এখন কি করি!

রাজার নিষেধাজ্ঞা শুনে বিচলিত শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীর সাথে পরামর্শ করলেন ━ হে প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য, তা আমাকে বলো।

উত্তরে রাজকন্যা বলল━ হে পতিদেব, আজ শুধু এই রাজপ্রাসাদে নয়, রাজ্যের কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো দূরে থাক, পশুরা পর্যন্ত অন্নজল মাত্র গ্রহণ করবে না। হে নাথ, যদি তুমি এ থেকে নিষ্কৃতি চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করাই ঠিক হবে। এখানে আহার করলে তুমি সকলের নিন্দাভাজন হবে এবং আমার পিতাও অত্যন্ত রাগান্বিত হবেন। এখন বিশেষভাবে বিচার করে যা ভাল মনে তাই কর।

সাধ্বী স্ত্রীর পরামর্শ শুনে শোভন চিন্তিত হয়ে বলল━ হে প্রিয়ে! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত পালন করব। তারপর দেখা যাক, ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে।

মনে শক্তি সঞ্চয় করে শোভন একাদশী ব্রত পালনে বদ্ধপরিকর হলেন। সমস্ত দিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি শুরু হল। বৈষ্ণবদের কাছে রাত্রিযাপন অত্যন্ত আনন্দকর। কিন্তু শোভনের পক্ষে তা ছিল বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। সারাদিন কোনভাবে অতিক্রান্ত হলেও রাতের দিকে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাত যত বাড়ে শারীরিক অবনতি হতে থাকে এবং রাত্রি শেষে সূর্যোদয়কালে তার মৃত্যু হয়। রাজা মুচুকুন্দ এতে অত্যন্ত দুঃখিত হল এবং যথাযথ নিয়মনিষ্ঠার সাথে তার শবদাহকার্য সুসম্পন্ন করলেন। শোকে দুঃখে চন্দ্রভাগা ভেঙ্গে পড়ল এবং স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার আদেশে পিতৃগৃহেই বাস করতে লাগল।

এইদিকে রমা একাদশী ব্রতের প্রভাবে শোভনের মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক সুশোভিত দেবপুরী প্রাপ্ত হল। একসময় মুচুকুন্দপুরের সোমশর্ম্মা নামক এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমণ করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন। সেখানে রত্নমণ্ডিত বিচিত্র স্ফটিকখচিত সিংহাসনে রত্নলঙ্কারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। সেখানে গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ নানা উপচারে তাকে পূজা করছিল। তিনি ব্রাহ্মণকে দেখে চিনতে পারলেন এবং রাজা মুচুকুন্দের জামাতারূপে আসন থেকে উঠে এসে তার চরণ বন্দনা করলেন। শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। সেই সঙ্গে তিনি  জিজ্ঞাসা করলেন━ এমন বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত করলেন, তা সবিস্তারে আমাকে বর্ণনা করুন।

শোভন ব্রাহ্মণকে আসনে বসতে দিয়ে নিজ স্থান অধিকার করলেন এবং সমস্ত ঘটনাটি বলতে শুরু করলেন ━ কার্ত্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশী সর্বব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা ভক্তি ও শ্রদ্ধাপূর্ণভাবে পালন করার সুকৃতি হিসাবে এই আশ্চর্যজনক পুণ্যফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানাবেন।

প্রসন্ন হয়ে সোমশর্ম্মা ফিরে এলেন মুচুকুন্দপুরে এবং চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে চন্দ্রভাগা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বললেন ━ হে ব্রাহ্মণ! আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না, আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।

তখন সোমশর্ম্মা বললেন ━ হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি স্বয়ং সচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো সুশোভিত দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি।  কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির করা যায় সেই মতো কোন উপায় বের কর।

এসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন ━ হে ব্রাহ্মণ! পতিদেবকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনই তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্যফলে এই নগরকে স্থির করে দেব।

তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামদেবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও একাদশী (হরিবাসর) ব্রত পালনের পুণ্যফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর লাভ করল। দিব্য গতি লাভ করে নিজ স্বামীর কাছে উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে এখানে দেখে শোভন কেবল অত্যাশ্চর্য হলেন তাই নয়, সাথে ভীষণ আনন্দিত হলেন।

বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের পুণ্যকথা জানালেন ━ হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকেই এই রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালন করতাম। ঐ ব্রতের পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং তা মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন ━ হে রাজন! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা দিব্যসুখে জীবন অতিবাহিত করতে লাগলেন।পাপনাশিনী ও ভক্তিমুক্তি প্রদায়িনী রমা একদশীর মাহাত্ম্য আমি আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণলোকে পূজিত হবেন।

🌸 জয় রমা একাদশী 🌸

🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸

─•━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━•─

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান

শ্রী হরিবাসরে হরিনাম কীর্তন বিধান
===========================

ক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।

তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।

প্রনিপাত (প্রনাম)
=================

 সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।

 জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।

 শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….

ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

x


Like it? Share with your friends!

213
182 shares, 213 points

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]