এই অধ্যায়ে বর্ণন করছি কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য কি? দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য (Deepdan Mahatmya) কি?
সারা বছরই ভগবান শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদন করতে হয়। প্রত্যহ আরতির জন্য ঘৃত প্রদীপ নিবেদন করা একটি অপরিহার্য অঙ্গ। তবে কার্তিক বা দামোদর মাসে শ্রীভগবানের উদ্দেশ্যে প্রদীপ নিবেদনের বিশেষ মাহাত্ম্য বিদ্যমান। শ্রীকৃষ্ণের শারদীয়া রাসযাত্রা বা লক্ষ্মী পূর্ণিমা থেকে হৈমন্তী রাস পূর্ণিমা পর্যন্ত একমাস দামোদর অষ্টকম্ গান করে ভক্তবৃন্দ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ আরতি করেন।
স্কন্দপুরাণ অনুযায়ী, “যদি আমরা (দামোদর মাসে) শ্রীবিগ্রহগণকে প্রদীপ নিবেদন করি তাহলে ১০০০ গুণ এবং অন্যান্য কাজের জন্য ১০০ গুণ সুফল লাভ করবো।”
দীপদানের পর দীপ-এর আরতির তাপ গ্রহণ করবেন আশীর্বাদ স্বরূপ… Next day… নতুন করে আবার দীপ তৈরি করবেন…. মাটির প্রদীপ হলে আর কাজে লাগবে না… পিতলের হলে মেজে নিয়ে আবার ব্যবহার করতে পারেন। 🙏🙏🙏
◉ করনীয় : এই মাস সর্বাপেক্ষা ভগবানের প্রিয় বলে প্রতিদিন ভগবান দামোদরের অর্চন, প্রাতঃস্নান, দীপদান, দামোদরাষ্টকম্ পাঠ (সত্যব্রত মুনি প্রণীত) ও দান ব্রতাদি পালন করবেন। মন্দির প্রদক্ষিণ, শাস্ত্র অধ্যয়ন এবং হরিকথা শ্রবণের ফলে পুনর্জন্ম রহিত হয়।
◉ বর্জনীয় : দামোদর মাসে মৎস্য, মাংস ভক্ষণে নরকত্ব প্রাপ্ত হয়। (ঔষধ হিসেবেও বর্জনীয়), মাসকলাই (অড়হর ডাল), বরবটি, শিম, কলমী শাক, পটল, বেগুল, তৈল, মধু, কাসার পাত্রে ভোজন ও পঁচা বাসি দ্রব্য বর্জন। দিবশয্যা ও শ্রীসঙ্গ দামোদর মাসে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
✤ 2023 – দামোদর মাসে দীপদানের সময়সূচী ✤
✸ ২৮শে অক্টোবর ২০২৩, শনিবার (১০ই কার্ত্তিক ১৪৩০ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান আরম্ভ।
✸ ২৭ নভেম্বর ২০২৩, সোমবার (১০ই অগ্রহায়ণ ১৪৩০ বঙ্গাব্দ) পূর্ণিমাঃ শ্রীদামোদরকে প্রদীপ দান সমাপন।
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
✤ দামোদর মাসে দীপদান মাহাত্ম্য কি? ✤
(Deepdan Mahatmya in Damodar Mass)
❖ যিনি কার্তিকমাসে বিশেষত একাদশী ও দ্বাদশীতে অতি সুন্দর দীপমালিকা রচনা করেন, তিনি দশ সহস্র সূর্যতেজ সদৃশ জ্যোতিদ্বারা দশদিক্ আলোকিত করে জ্যোতির্ময় বিমানে জগৎ আলোকিত করে বিষ্ণুলোকে গমন করেন। ─── ভবিষ্যপুরাণ
❖ “কার্তিক মাসে যদি কোনো ব্যক্তি পরমেশ্বর ভগবান শ্রী কেশবের উদ্দেশ্যে একটি দীপ প্রজ্বলন করে থাকেন, তাহলে তিনি সকল যজ্ঞ এবং সমস্ত তীর্থে স্নান সম্পন্ন করার সুফল প্রাপ্ত হন।“ ─── হরিভক্তিবিলাস ১৬ / ১০৪
✸ আকাশদীপ দেখানোর মাহাত্ম্য :
যে মানব কার্তিকে উচ্চ আকাশে দীপ দান করেন, তিনি সর্বকুল উদ্ধার করে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন। যে মানব কার্তিকে শ্রীবিষ্ণুর উদ্দেশ্যে আকাশে ও জলে দীপ দান করেন, তিনি ধনধান্য, সমৃদ্ধিশালী, পুত্রবান্ ও ঐশ্বর্যশালী হন, তাঁর নয়নযুগল সুশোভন হয় এবং তিনি বিদ্বান হয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ─── স্কন্দপুরাণ
✸ মন্দিরে দীপমালা রচনা ও দীপ প্রজ্বলন করার মাহাত্ম্য :
যিনি ভগবানের মন্দির আলো দ্বারা সজ্জিত করেন, সেই ব্যক্তি ভগবদ্ধাম তো প্রাপ্ত হন শ্রীহরিমন্দিরের বাইরে ও ভিতরে দীপমালা রচনা করেন, তিনি শ্রীবিষ্ণুর পার্ষদ হতে পারেন। যিনি শ্রীহরিমন্দিরে দীপমালা রচনা করেন, তার বংশে উদ্ভুত লক্ষপুরুষের নরক গমন হয় না। হে মুনে! শ্রীবিষ্ণুমন্দিরের বাইরে-ভেতরে যিনি দীপ প্রজ্বলন করেন, তিনি যখন ভগবদ্ধামে প্রবেশ করবেন তখন দেবতারা প্রদীপ হাতে সেই মহাত্মাকে বরণ করবেন। ─── স্কন্দপুরাণ
❖ “এমনকি যদি কোন মন্ত্র, কোন পুণ্যা কর্মফল এবং বিশুদ্ধতা নাও থাকে, তবুও যখন একজন ব্যক্তি দামোদর মাসে দীপদান করেন, তখন সবকিছুই পূর্ণতাপ্রাপ্ত হয়।“ ─── হরিভক্তিবিলাস ১৬ / ১০৩
❖ পিতৃপক্ষে অন্নদান, গ্রীষ্মকালে জলদান দ্বারা যে ফল হয়, কার্তিক মাসে প্রদীপ দান কেন, অন্যের নিবেদিত প্রদীপও যদি কেউ উদ্দীপিত করে, তবে সেই ফল লাভ হয়।
হরিমন্দিরে অন্যের দানকৃত দীপকে যারা উজ্জ্বল করে অর্থ্যাৎ আলো বাড়িয়ে দেয়, তারা যম যন্ত্রণা থেকে নিস্তার লাভ করে। ─── হরিভক্তিবিলাস ১৬ / ১২৬-১২৮
একদিন কার্তিক একাদশীতে বিষ্ণুমন্দিরে রাত্রিবেলায় এক ইঁদুর প্রায় নিবন্ত প্রদীপের ঘি খেতে গিয়ে যেই মুখ লাগালো অমনি সলতে নড়ে গিয়ে উজ্জ্বল হয়ে জ্বলতে শুরু করল। ইঁদুরটির মুখে দীপের আগুন লেগে গিয়ে ইঁদুর দেহত্যাগ করল। তারপর ইঁদুরটি সেই বিষ্ণুমন্দিরের পূজারীর কন্যারূপে জন্মগ্রহণ করল। সেই কন্যাটি ভক্তিভরে, বিষ্ণুমন্দিরের মার্জনাদি কর্ম এবং বিষ্ণুর জন্য ফুল সংগ্রহ, মালা বানিয়ে নিবেদন করা প্রভৃতি সেবায় যুক্ত হলো। মনুষ্য জন্মের অন্তিম লগ্নে বিষ্ণুলোকে গমন করল। এই হলো পরের প্রদীপ নিবেদন করার ফল।
❖ “কেউ যদি এই দামোদর মাসে ভগবানের উদ্যেশ্য দীপদান করেন তিনি যদি নিমেষের অর্ধেক সময়েরও অর্থ্যাৎ চোখের পলক ফেলতে যতটুকু সময় লাগে, সেই সময়ের অর্ধেক সময়ের জন্য যদি তিনি দীপদান করেন, তবে তাঁর সহস্র কোটি কল্পের পাপ বিদূরিত হয়ে যায়।” ─── স্কন্দপুরাণ
❖“কেউ যদি ভগবানকে নিবেদনকৃত প্রসাদী প্রদীপ তাঁর পূর্বপুরুষের উদ্যেশ্য দান করেন, তাহলে সেই পূর্বপুরুষেরা পবিত্রতা এবং শান্তি লাভ করেন।” ─── পদ্মপুরাণ
❖ এই মাসে দীপ দান করলে সর্ব যজ্ঞের এবং সর্ব তীর্থের ফল লাভ হয়।
❖ প্রজ্বলিত কর্পূর দিয়ে দীপদানের মাধ্যমে আরতি করলে সপ্তকল্প যাবৎ ভগবদ্ধামে বাস হয়।
❖ শ্রীহরির সম্মুখে দীপ দান করলে কাম-ক্রোধ ভস্মীভূত হয় এবং পুনর্জন্ম হয় না।
❖ দীপের আলোতে ভগবানের মুখমন্ডল দর্শন করলে ব্রহ্মাহত্যাদি পাপ হতে মুক্ত হওয়া যায়।
❖ যে গৃহে দীপদান করা হয় তাঁর সর্বদা ধন, যশ, সুপুত্র লাভ হয় এবং পূর্বপুরুষগণ সন্তুষ্ট হয়।
❖ যে বাড়ীতে সকাল-সন্ধ্যা ধূপ-প্রদীপ দেখানো হয় সেই বাড়ীতে মা লক্ষ্মী অচলা থাকেন।
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
✤ দামোদর মাস বা কার্তিক মাসের মাহাত্ম্য কি? ✤
(Significance of Kartik Maas or Damodar Mass)
✺ দামোদর মাস বা কার্তিক মাস সনাতন ধর্মালম্বীদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মাস। এই মাস ভগবান বিষ্ণুর মাস বলে খ্যাত।
✺ এই মাস ত্যাগের মাস হিসেবেও পরিচিত। এই মাসে ভগবান বিষ্ণুর সেবা একগুণ করলে সহস্রগুণ ফল লাভ করা যায় । এই মাসে প্রত্যেক মন্দিরে বা তুলসী গাছের নীচে বিষ্ণুর প্রীতি লাভের জন্য দ্বীপ দান করা হয়।
✺ এই পূণ্য মাস সম্পর্কে পদ্মপুরাণ, ভাগবতপুরাণ, স্কন্ধপুরাণ ও শ্রীহরিভক্তিবিলাস শাস্ত্রে অসংখ্য তথ্য বলা আছে। পদ্মপুরাণে বলা হয়েছে, এই পূণ্য মাসে ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে কেউ যদি একটি প্রদীপ দান করে তবে, তার সমস্ত পাপ নাশ হবে এবং তার পুনর্জন্ম আর হবে না।
✺ তিনি সংসারে অজেয় ও অক্ষয়কীর্তি স্থাপন করবেন। নিরন্তন প্রদীপ জ্বালানো উচিত। প্রদীপটি মাটির হলে উত্তম হয়। প্রদীপটি জ্বালাতে সলিতা ও ঘি, তিলের তেল বা কর্পূর ব্যবহার করা হয়। কৃত্রিম ঘি ব্যবহার করবেন না। প্রদীপের আলোতে যেমন, চারদিক আলোকিত হয়ে সমস্ত অন্ধকার দূর করে; তেমনি ভক্তি ও জ্ঞান দ্বারা সকলের পাপ দূরীভূত হয়। অর্থাৎ প্রদীপের আলোর শিখা যত উজ্জ্বল হতে থাকবে, ততই তার পাপ ক্ষয় হতে থাকবে।
✺ স্কন্ধ পুরাণে বলা হয়েছে, এই মাসে যে প্রদীপ দান না করে তারা ব্রহ্মঘাতী, গোঘাতী, স্বর্ণ অপহারী ও সদা মিথ্যাবাদী। দামোদর মাসে স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণ তার মাতৃ স্নেহের বন্ধনে আবদ্ধ হন।
পৌরাণিক কাহিনী মতে, কলিপ্রিয়া তার স্বামীকে বধ করেছিল এবং তার ভুল বুঝতে পেরে সে নিজের পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য এই দীপ দান করেন। এই পবিত্র মাসে দীপ দানের জন্য তিনি দেহান্তে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হন।
আবার, এক স্ত্রী ইঁদুর প্রদীপের তেল খেতে এসে নিজের অজান্তেই প্রদীপের সলিতাকে উস্কে দেয় বা জ্বলতে সাহায্য করে; আর যার ফলশ্রুতিতে দেহান্তের পর সে ও বৈকুন্ঠলোক প্রাপ্ত হোন।
✺ পূজা দেয়ার সময় ভগবান বিষ্ণুর চিত্রপট বা বিগ্রহের চরণে চার বার, নাভি কমলে দুই বার, মুখমন্ডলে তিনবার ও সর্বাঙ্গে সাত বার (ডানদিক থেকে আরম্ভ করে) প্রদীপ প্রদক্ষিণ করাতে হয়। দামোদর মাসে সম্পূর্ণ ভক্তি ,বিশ্বাস ও প্রেম দ্বারা ভগবান বিষ্ণুর পূজা করলে দেহান্তে বৈকুন্ঠ লাভ বা মুক্তি লাভ হয়। তাই, আপনারা অন্তত পক্ষে একটি প্রদীপ ভগবান বিষ্ণুর উদ্দেশ্যে অর্পণ করুন।
🌸শ্রী দামোদর ভগবান কি জয় 🌸
🌸 জয় শ্রীরাধেশ্যাম 🌸
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
🪔🪔🪔 শ্রীদামোদরাষ্টকম্ 🪔🪔🪔
—- (শ্রীমৎ সত্যব্রত মুনিকৃত)
নমামীশ্বরং সচ্চিদানন্দরূপং
লসৎ-কুণ্ডলং গোকুলে ভ্রাজমানম্।
যশোদভিয়োলূখলাব্ধাবমানং
পরামৃষ্টমত্যং ততো দ্রুত্য গোপ্যা ॥ ১ ॥
অনুবাদ: যিনি সচ্চিদানন্দ-স্বরূপ, যাঁর কর্ণযুগলে কুন্ডল আন্দোলিত হচ্ছে, যিনি গোকুলে পরম শোভা বর্দ্ধন করছেন এবং যিনি শিক্য অর্থাৎ শিকায় রাখা নবনীত (মাখন) অপহরণ করে মা যশোদার ভয়ে উদূখলের উপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে অতিশয় বেগে পলায়ন করেছিলেন ও মা যশোদাও যাঁর পিছনে ধাবিত হয়ে পৃষ্ঠদেশ ধরে ফেলেছিলেন, সেই পরমেশ্বররূপী শ্রীদামোদরকে প্রণাম করি।
রুদন্তং মুহুর্নেত্রযুগ্মং মৃজন্তং
করাম্ভোজযুগ্মেন সাতঙ্কনেত্রম্।
মুহুঃশ্বাসকম্প-ত্রিরেখাঙ্ককণ্ঠ-
স্থিত-গ্রৈব-দামোদরং ভক্তিবদ্ধম্ ॥ ২ ॥
অনুবাদ: যিনি মায়ের হাতে লাঠি দেখে কাঁদতে কাঁদতে দু’খানি পদ্মহস্ত দিয়ে বারবার চোখদুটিকে রগড়াচ্ছেন, যাঁর চোখে ভয়ের লক্ষণ ফুটে উঠেছে ও ভয়ের কারণে মুহুর্মুহুঃ শ্বাস-প্রশ্বাস পড়ছে, শ্বাস-প্রশ্বাসে কম্পন অনুভূত হচ্ছে, যাঁর কণ্ঠস্থ মুক্তাহার দোদুল্যমান হচ্ছে এবং যাঁর উদরে দড়ির বাঁধন রয়েছে, সেই ভক্তিবদ্ধ শ্রীদামোদরকে বন্দনা করি।
ইতীদৃকস্বলীলাভিরানন্দকুণ্ডে
স্বঘোষং নিমজ্জন্তমাখ্যাপয়ন্তম্।
তদীয়েশতজ্ঞেষু ভক্তৈর্জিতত্ত্বং
পুনঃ প্রেমতস্তং শতাবৃত্তি বন্দে ॥ ৩ ॥
অনুবাদ: যিনি এইরকম বাল্যলীলার দ্বারা সমস্ত গোকুলবাসীকে আনন্দ সরোবরে নিমজ্জিত করেন এবং যিনি ভগবদৈশ্বর্য-জ্ঞান-পরায়ণ ভক্তসমূহে ‘আমি কর্তৃক পরাজিত অর্থাৎ ভক্তের বশীভূত’- এই তত্ত্ব প্রকাশ করেন, সেই ঈশ্বররূপী দামোদরকে আমি প্রেম-সহকারে শত শতবার বন্দনা করি।
বরং দেব ! মোক্ষং ন মোক্ষাবধিং বা
ন চান্যং বৃণেহহং বরেশাদপীহ।
ইদন্তে বপুর্নাথ! গোপালবালং
সদা মে মনস্যাবিরাস্তাং কিমন্যৈঃ ॥ ৪ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তুমি সবরকম বরদানে সমর্থ হলেও আমি তোমার কাছে মোক্ষ বা মোক্ষের পরাকাষ্ঠাস্বরূপ শ্রীবৈকুন্ঠলোক বা অন্য কোন বরণীয় বস্তু প্রার্থনা করি না, তবে আমি কেবল এই প্রার্থনা করি যে, এই বৃন্দাবনস্থ তোমার ঐ পূর্ববর্ণিত বালগোপালরূপী শ্রীবিগ্রহ আমার মানসপটে সর্বদা আবির্ভূত হোক। হে প্রভু! যদিও তুমি অন্তর্যামীরূপে সর্বদা হৃদয়ে অবস্থান করছ, তবুও তোমার ঐ শৈশব লীলাময় বালগোপাল মূর্তি সর্বদা সুন্দররূপে আমার হৃদয়ে প্রকটিত হোক।
ইদন্তে মুখাম্ভোজমব্যক্তনীলৈ-
র্বৃতং কুন্তলৈঃ স্নিগ্ধ-রক্তৈশ্চ গোপ্যা।
মুহুশ্চুম্বিতং বিম্ব-রক্তাধরং মে
মনস্যাবিরাস্তামলং লক্ষলাভৈঃ ॥ ৫ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার যে বদন-কমল অতীব শ্যামল, স্নিগ্ধ ও রক্তবর্ণ কেশসমূহে সমাবৃত এবং তোমার যে বদনকমলস্থ বিম্বফলসদৃশ রক্তবর্ণ অধর মা যশোদা বারবার চুম্বন করছেন, সেই বদনকমলের মধুরিমা আমি আর কি বর্ণন করব? আমার মনোমধ্যে সেই বদন-কমল আবির্ভূত হোক। ঐশ্বর্যাদি অন্যবিধ লক্ষ লক্ষ লাভেও আমার কোন প্রয়োজন নেই- আমি অন্য আর কিছুই চাই না।
নমো দেব দামোদরানন্তবিষ্ণো
প্রসীদ প্রভো দুঃখজালাব্ধিমগ্নম্।
কৃপাদৃষ্টি-বৃষ্ট্যাতিদীনং বতানু-
গৃহানেশ মামজ্ঞমেধ্যক্ষি দৃশ্যঃ ॥ ৬ ॥
অনুবাদ: হে দেব! হে দামোদর! হে অনন্ত! হে বিষ্ণু! আমার প্রতি প্রসন্ন হও। হে প্রভু! হে ঈশ্বর! আমি দুঃখপরম্পরারূপ সমুদ্রে নিমগ্ন হয়ে একেবারে মরণাপন্ন হয়েছি, তুমি কৃপাদৃষ্টিরূপ অমৃত দ্বারা আমার প্রাণ রক্ষা কর।
কুবেরাত্মজৌ বদ্ধমূর্ত্যৈব যদ্বৎ
ত্বয়া মোচিতৌ ভক্তিভাজৌ কৃতৌ চ।
তথা প্রেমভক্তিং স্বকাং মে প্রযচ্ছ
ন মোক্ষে গ্রহোমেহস্তি দামোদরেহ ॥ ৭ ॥
অনুবাদ: হে দামোদর! তুমি যেভাবে গো অর্থাৎ গাভী-বন্ধন রজ্জুদ্বারা উদূখলে বদ্ধ হয়ে শাপগ্রস্থ নলকুবের ও মণিগ্রীব নামক দুই কুবের পুত্রদেরকে মুক্ত করে তাদের ভক্তিমান্ করেছ, আমাকেও সেইরূপ প্রেমভক্তি প্রদান কর।
নমস্তেহস্তু দাম্নে স্ফুরদ্দীপ্তি-ধাম্নে
ত্বদীয়োদরায়াথ বিশ্বস্য ধাম্নে।
নমো রাধিকায়ৈ ত্বদীয়-প্রিয়ায়ৈ
নমোহনন্তলীলায় দেবায় তুভ্যম্ ॥ ৮ ॥
অনুবাদ: হে দেব! তোমার তেজোময় উদরবন্ধন-রজ্জুতে এবং বিশ্বের আধার-স্বরূপ তোমার উদরে আমার প্রণাম নিবেদন। তোমার প্রিয়তমা শ্রীরাধিকাকে আমি প্রণাম নিবাদন করি এবং অনন্তলীলাময় দেব তোমাকেও প্রণতি নিবেদন করি।
◼️ প্রতিদিন শ্রীদামোদরাষ্টকম্ পাঠ করে “শ্রীশ্রী-রাধাদামোদর” কে ঘৃত প্রদীপ, অথবা তুলসী কাষ্ট প্রদীপ। নিবেদন করতে হয়।
অষ্টকম্ পাঠ করতে সম্ভব না হলে (হরেকৃষ্ণ মহামন্ত্র) কীর্তন করে দীনদান করা যাবে।
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
✤ কেন কার্তিক মাস শ্রেষ্ঠ? ✤
★ স্কন্ধপুরান ও পদ্মপুরানে বর্নিত আছে যে, এই কার্তিক (দামোদর) মাস ধর্ম, অর্থ, কাম এবং মোক্ষ প্রদান করা মাস।
বিশেষরূপে স্নাণ, দান এবং তুলসী পূজা এই কার্তিক মাসে বিশেষ ফলদায়ী হয়। এই কার্তিক মাসে দীপদান করলে পাপ নষ্ট হয়।
★ স্কন্ধপুরানে বর্নিত আছে যে, এই মাসে যে ব্যক্তি মন্দিরে, ভগবানের বেদীতে, নদীর কিনারে, তুলসীর সামনে এবং শয়নকালে দীপ জ্বালায়, সেই ব্যক্তির সর্বসুখ প্রাপ্ত হয়। এই কার্তিক মাসে ভগবান বিষ্ণু এবং মা লক্ষ্মীর সামনে দীপ জ্বালালে এবং উনাদের উপাসনা করলে অসীম পুন্য ফল প্রাপ্ত হয়।
★ তুলসী ভীষণ পবিত্র এবং আমাদের আস্থা ও শ্রদ্ধার প্রতীক। এছাড়াও তুলসী অপরিমিত ঔষধীয় গুন যুক্ত। সারা বছর তুলসীতে জল অর্পন করাকে শ্রেষ্ঠ মানা হয়ে থাকে। বিশেষত কার্তিক মাসে তুলসীর নিকট দীপ জ্বালালে সেই ব্যক্তি ভীষণ পুণ্যের ভাগীদার হন এবং তিনি সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মীর কৃপা প্রাপ্ত হন, কেননা তুলসীতে সাক্ষাৎ মা লক্ষ্মীর নিবাস মানা হয়ে থাকে।
পৌরাণিক কথানুসারে – গুনবতী নামক এক নারী সর্বদা কার্তিক মাসে মন্দির দোয়ার চত্বরে একটি করে তুলসী গাছ লাগাতেন। ঐ পুন্যের কারনে তিনি পর জন্মে সত্যভামা রূপে জন্মগ্রহন করেন এবং সর্বদা কার্তিক মাসের ব্রত পালন করার কারনে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের পত্নী হওয়ার সৌভাগ্য প্রাপ্ত হন। এটাই হলো তুলসীর আরাধনার ফল।
★এই মাসে তুলসী বিবাহের পরম্পরা আছে, যা কার্তিক মাসের পূর্ণিমা তিথিতে করা হয়ে থাকে। এতে তুলসীর পাতাকে সাজানো হয় এবং ভগবান শালগ্রামের পূজা করা হয়ে থাকে এবং তুলসী দেবীর বিধিবৎ বিবাহ করা হয়ে থাকে।
★ তুলসীদেবীর আরাধনা করলে ঘরে সর্বদা সুখ শান্তি বিরাজ করে।
তাই প্রতিটি ভগবৎ ভক্তজন এই কার্তিক মাসে স্নান, ধ্যান, দান করতে করতে তুলসী দেবীর আরাধনা করে অনন্য ভক্তির মাধ্যমে ভগবানের কৃপা লাভ করার সুযোগ গ্রহন করি। এটাই হলো এই মাসের শ্রেষ্ঠতার রহস্য!
◼️ দামোদর ব্রত সংকল্প মন্ত্র ◼️
❝কার্তিকেহহয়ং করিষ্যামি প্রাতস্নানং জনার্দন।
প্রীত্যর্থং তব দেবেশ দামোদর ময়া সহ ॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭২)
অনুবাদ: হে জনার্দন! হে দেবেশ! হে দামোদর! শ্রীরাধিকাসহ আপনার প্রীতির জন্য কার্তিকে আমি প্রাতঃস্নান করবো।
◼️ দামোদর প্রার্থনা মন্ত্র ◼️
❝তব ধ্যানেন দেবেশ জলেহস্মিন স্নাতুমুদ্যতঃ।
তৎ প্রাসাদাচ্চ মে পাপং দামোদর বিনশ্যতু॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৩)
অনুবাদ: হে দেবেশ! তোমার ধ্যান করে আমি এই জলে স্নান করতে উদ্যত। হে দামোদর! তোমার প্রসাদে আমার পাপ বিনাশ হোক।
◼️ দামোদর অৰ্ঘ্য মন্ত্র ◼️
❝ব্ৰতিনঃ কার্তিকে মাসি স্নাতস্য বিধি বন্মম।
দামোদর গৃহাণার্ঘ্যং দনুজেন্দ্ৰনিসূদন॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৪)
❝নিত্যে নৈমিত্তিকে কৃৎস্নে কার্তিকে পাপশোষণে।
গৃহাণার্ঘং ময়া দত্তং রাধয়া সহিত হরে॥ ❞
━━┉┈┈(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস-১৬/১৭৫)
অনুবাদ: নিত্যনৈমিত্তিক সমস্ত পাপ শোষণকারী কার্তিক মাসে ব্রতী আমি বিধিবৎ স্নানকারী। হে দামোদর! দনুজেন্দ্রনিসূদন! হে হরে! আমার প্রদত্ত অর্ঘ্য রাধিকাসহ গ্রহন করুন।
(শ্রীশ্রী হরিভক্তিবিলাস- ১৬/১৭৪-৭৫)
🪔 আকাশ দীপ দান মন্ত্ৰ 🪔
❝দামোদরায় নভসি তুলায়াং লোলয়া সহ।
প্রদীপন্তে প্রযচ্ছামি নমোহনন্তায় বেধসে॥ ❞
━━┉┈┈(পদ্মপুরাণ)
অনুবাদ: কার্তিকে আকাশে শ্রীরাধিকার সাথে দামোদরকে প্রদীপ দান করছি, শ্রীঅনন্তকে ও ভগবান শ্রীবিষ্ণুকে প্রনাম নিবেদন করছি।
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
✤ দামোদর ব্রতের (নিয়ম সেবা) সংকল্প ✤
❝হৃষীকেনং হৃষীকেশ সেবনং ভক্তিরুচ্যতে❞
অনুবাদ: সর্বান্তকরণে ইন্দ্রিয়সমূহ দ্বারা ইন্দ্ৰিয়াধিপতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের সেবাই হল ভক্তি।
কিভাবে সময়ের সর্বোচ্চ উপযোগ করে ভগবানের সেবা করা যায় সেটাই দামোদর ব্রতের সংকল্প হওয়া উচিত। তবে সর্বাগ্রে এটা খেয়াল রাখা উচিত যে, নিয়মগুলো (সংকল্প) যেন লোকদেখানো বা শুধুই নিয়মমাত্র থেকে না যায়। ব্রতের সময়সীমা পর্যন্ত যেন সেগুলো পালনযোগ্য হয় সেটাও বিবেচনা করতে হবে। ইষ্টদেবের প্রীতিবিধানার্থ নানাবিধ ব্রতনিয়ম বা সংকল্প করা যেতে পারে। যেমন–
১ । নিত্য মঙ্গলারতি দর্শন ও গুরুপূজায় অংশগ্রহণ ।
২। নিত্য ভাগবত ক্লাসে যোগদান ।
৩। হবিষ্যান্ন গ্রহণ ।
৪। সন্ধ্যায় আরতিতে অংশগ্রহণ ও দামোদরের জন্য দীপদান ।
৫। বেশি সংখ্যক হরিনাম জপ
৬ । সকাল-সন্ধ্যা প্রতিদিন তুলসী পূজা ও পরিক্রমা ।
৭। মন্দির পরিক্রমা।
৮। বেশি সংখ্যক গ্রন্থ প্রচার ।
৯ । প্রতিদিন ‘দামোদরাষ্টকং’ পাঠ ।
১০ । ‘লীলাপুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণ’, ‘শ্রীমদ্ভগবদ্গীতা যথাযথ’, ‘শ্রীমদভাগবত’ প্রভৃতি গ্রন্থাদি পাঠ। (ইত্যাদি)
─•━━━━━⊱♦️✥♦️⊰•⊰❁*❀❁❁❀*❁⊱⊱♦️✥♦️⊰•━━━━•─
❖ প্রনিপাত ❖
✸ সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
✸ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
✸ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….
✸ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!
► আরও পড়ুন: Desire, Karma and Destiny || বাসনা, কর্ম ও কর্মফল
You must be logged in to post a comment.