আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া একাদশীর নাম ইন্দিরা একাদশী। পিতৃপক্ষের এই একাদশী বিশেষ ফলদায়ক। যেহেতু ইন্দিরা একাদশী পিতৃপক্ষে পড়ে, পূর্বপুরুষদের জন্য উৎসর্গীকৃত পাক্ষিক, এটিকে ‘একাদশী শ্রাদ্ধ‘ও বলা হয়।
সেই সঙ্গে বর্ণন করা হয়েছে ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য (Significance of Indira Ekadashi), সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত, সংকল্প মন্ত্র, পারণ মন্ত্র। ইন্দিরা একাদশী ব্রত (Indira Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?
সেই সঙ্গে জেনে রাখা উচিত কেন আমরা একাদশী ব্রত পালন করব? তাই আমাদের জেনে রাখা উচিত একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য।
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ✤
◉ একাদশী করলে যে কেবল মাত্র নিজের জীবন এর সদগতি হয় তা নয়, একাদশী ব্যক্তির প্রয়াত পিতা মাতা নিজ কর্ম দোষে নরকবাসী হন, তবে সেই পুত্রই পিতা মাতাকে নরকের থেকে উদ্ধার করতে পারবে।
◉ একাদশীতে অন্ন ভোজন করলে ব্যক্তি যেমন নরকবাসী হয়, তেমনই অন্যকে অন্নভোজন করালেও নরকবাসী হয়। কাজেই একাদশী ব্রত পালন করা আমাদের সকলের কর্তব্য।
◉ ১টি খাদ্য শস্যের মধ্যে চার ধরনের পাপ থাকে। পাপ গুলো হল ──
১। মাতৃ হত্যার পাপ।
২। পিতৃ হত্যার পাপ।
৩। ব্রহ্ম হত্যার পাপ।
৪। গুরু হত্যার পাপ।
আমরা মাত্র একটি দানা নয় প্রতি গ্রাসে হাজার হাজার দানা ভক্ষণ করি। সুতরাং ভেবে দেখতে হবে, যে পাপ কাজ আদৌ করি নি সেই পাপ কাজের ভাগীদার আমাদেরকে হতে হবে।
◉ বিভিন্ন পুরানে একাদশী মহাব্রত সম্পর্কে কি বলা হয়েছে?
১। সকল পুরাণে মুনিদের এই নিশ্চিত মত যে, একাদশীতে উপবাস করলে সকল পাপ হইতে মুক্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্তপুরাণ)
২। একদা শ্রী যমরাজ ব্রাহ্মনকে বলেছেন, “হে ব্রাহ্মণ! যাদের পুত্র ও পৌত্র একাদশী ব্রত করে আমি শাসন কর্তা যম হয়েও বিশেষরূপে তাদের নিকট ভীত হই। যারা একাদশী ব্রত পরায়ন সেই মহাত্মারা বল পূর্বক স্বীয় শত পুরুষ উদ্ধার করেন।” ──(পদ্মপুরাণ)
৩। একাদশীতে উপবাস, ইহাই সার, ইহাই তত্ত, ইহাই সত্য, ইহাই ব্রত, ইহাই সম্যক প্রায়শ্চিত্ত স্বরূপ। ──(ব্রহ্মবৈবর্ত্ত পুরাণ)
৪। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠ লোকে উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়।
৫। একাদশীর দিন বিষ্ণুর জন্য সবকিছু রন্ধন করা হয় এমনকি অন্ন এবং ডাল ও কিন্তু শাস্ত্রের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, বৈষ্ণবদের বিষ্ণুর প্রসাদ গ্রহণ করা উচিৎ নয়। সেই প্রসাদ পরের দিন গ্রহণ করার জন্য রেখে দেওয়া যেতে পারে। একাদশীর দিন কোন রকম শস্যদানা এমনকি অন্ন তা যদি বিষ্ণুর প্রসাদও হয় তবুও তা গ্রহণ করতে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
৬। বিধবা না হলে শাস্ত্র অনুসারে একাদশী ব্রত পালন করার প্রথা শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রবর্তন করে ছিলেন। ──(শ্রীচৈতন্য চরিতামৃত আদিলীলা (১৫/৮-১০)
৭। অনেকের ধারনা পুরী ধামে শ্রীজগন্নাথ দেবের প্রসাদ ভক্ষন দোষাবহ নহে। এই ধারনার বশবর্তী হইয়া পুরীতে অনেকেই নিঃসঙ্কোচে অন্ন গ্রহণ করেন, ইহা সম্পূর্ণ শাস্ত্র বিরুদ্ধ বিচার।
৮। বিধাবা নারী এবং মতিগণ (তেজস্বী) যদি একাদশী ব্রত না করে তাহলে প্রণয় কাল পর্যন্ত তাদের অন্ধকারময় নরকে পঁচে মরতে হয়। ──(শারদীয় পুরাণ)
৯। হে রাজন! যতদিন আয়ু থাকবে ততদিন একাদশী উপবাস থাকবে। ──(অগ্নিপুরাণ)
১০। বিধবা রমণী একাদশীতে আহার করলে, তার সর্বপ্রকার সুকৃতি নষ্ট হয় এবং দিনদিন তার ভ্রণহত্যা পাপের অপরাধ হয়। ──(কাত্যায়ন সংহিতা)
১১। যিনি একাদশী ব্রত পরিত্যাগ করে অন্য ব্রতের উপাসনা করেন, তার হাতের মহা মূল্যবান রত্ন পরিত্যাগ করে লোহা যাচনা করা হয়। ──(তত্ত্বসাগর)
১২। দেবাদিদেব শিব দূর্গা দেবী কে বলেছেন হে মহাদেবী যারা হরি বাসরে (একাদশীতে) ভোজন করে যমদূতগণ যমালয়ে নিয়ে তাদের অগ্নিবর্ন তীক্ষ লৌহাস্ত্র তাদের মুখে নিক্ষেপ করে। ──(স্কন্দপুরাণ)
১৩। যে মানুষ একাদশীর দিন শস্যদানা গ্রহণ করে সে তার পিতা, মাতা, ভাই এবং গুরু হত্যাকারী এবং সে যদি বৈকুন্ঠলোকেও উন্নীত হয় তবুও তার অধঃপতন হয়। ──(স্কন্দপুরাণ)
তাহলে কেন আমরা জেনে শুনে পাপ কর্ম করছি? যেসকল ভক্তবৃন্দরা একাদশী মহাব্রত পালন না করে যে পাপ করছেন তা থেকে বিরত থাকুন। তারা সহ সকল ভক্তবৃন্দরাই একসাথে একাদশী মহাব্রত পালন করি এবং আমাদের এই দুর্লভ মানব জীবনকে স্বার্থক করি।
আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ ইন্দিরা একাদশী মাহাত্ম্য ✤
(Significance of Indira Ekadashi)
◼️ আশ্বিন মাসে ইন্দিরা ও পাপাঙ্কুশা একাদশী পড়ে। ইন্দিরা একাদশীর উপবাস করলে সেই ব্যাক্তির পূর্বপুরুষরা যদি কর্মবিপাকের কারনে অধঃপতিত হয়ে নিম্নযোনি লাভ করেন, সেই পূর্বপুরুষদেরও উত্তম গতি লাভ হয়, মোক্ষ লাভ করে এবং নবজীবন লাভ করে।
অন্যদিকে পাপঙ্কুশা একাদশীর উপবাস করলে সেই ব্যাক্তি সমস্ত পাপ থেকে মুক্ত হয় এবং প্রচুর সম্পদ, সমৃদ্ধি এবং সুখ প্রাপ্ত হয়।
◼️ এই দিনে ভগবানের আরাধনা, পূজা-অর্চনা করলে উপবাসকারী শ্রী হরি বিষ্ণুর আশীর্বাদ লাভ করেন এবং তার সমস্ত মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়।
◼️ এই তিথি সর্বপাপবিনাশিনী। যিনি শ্রী হরির অর্চনে নিষ্ঠা সহকারে এই ব্রত পালন করেন তিনি সর্বপাপ মুক্ত হন এবং তিনি শ্রী হরি চরণে ভক্তি লাভ করে অবশেষে দিব্য ধামে গমন করেন।
◼️ ইন্দিরা একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য পাঠ ও শোনামাত্রেই সামবেদীয় যজ্ঞের ফল লাভ করা যায়। শুধু তাই নয়, এই ইন্দিরা একাদশীর মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে মানুষ সকল পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ ইন্দিরা একাদশী ২০২৩ : সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত ✤
(Indira Ekadashi 2023 : Timing and Pārana Muhūrta)
যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।
দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।
✺ ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী 10 অক্টোবর 2023 মঙ্গলবার ইন্দিরা একাদশী।
✺ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২শে আশ্বিন ১৪৩০ বঙ্গাব্দ।
সোমবার ভোরে ( অর্থাৎ ব্রহ্ম মুহূর্তে) স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।
পারণ : ইন্দিরা একাদশীর ঠিক পরদিন অর্থাৎ বুধবার সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে নিচে উল্লেখিত ঠিক পারন মুহূর্তের মধ্যে –
❏ সকাল ০৬:০১ থেকে ০৯:৪২ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, বাংলাদেশ সময় এবং
❏ সকাল ০৫:৩৫ থেকে ০৯:২৮ মিনিটের মধ্যে কলকাতা, পশ্চিমবঙ্গ, ভারতীয় সময়।
❏ সকাল ০৬:১৯ থেকে ১০:১২ মিনিটের মধ্যে দিল্লি, ভারতীয় সময়।
ভোরে স্নান সেরে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের নিকট অবশ্যই অর্পণ করবেন, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।
একাদশী ব্রত পালনের প্রকৃত উদ্দেশ্য কেবল উপবাস করা নয়, নিরন্তর শ্রীভগবানের স্মরণ, মনন ও শ্রবন কীর্ত্তনের মাধ্যমে একাদশীর দিন অতিবাহিত করতে হয়। শ্রীল প্রভুপাদ ভক্তদের এই দিন পঁচিশ মালা বা যতেষ্ট সময় পেলে আরও বেশী জপকরার নির্দেশ দিয়েছেন। একাদশী পালনের সময় পরনিন্দা, পরিচর্চা, মিথ্যা ভাষন, ক্রোধ, দুরাচারী, স্ত্রী সহবাস সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ।
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ ইন্দিরা একাদশী সংকল্প মন্ত্র ✤
(Indira Ekadashi Saṅkalpa Mantra)
একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে আমরা অবশ্যই সংকল্প নেব –
একাদশ্যাম্ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।
ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্ মে ভবাচ্যুত।।
অনুবাদ: হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ ইন্দিরা একাদশী পারন মন্ত্র ✤
(Indira Ekadashi Pārana Mantra)
একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে।
একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ —
ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।
প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥
—- (বৃ: না: পু: ২১/২০)
অনুবাদ: হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।
এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে
আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
✤ ইন্দিরা একাদশী ব্রত কথা ✤
(Indira Ekadashi Vrat Kathā)
✸ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া ইন্দিরা একাদশীর মাহাত্ম্য ব্রহ্মবৈবর্ত পুরাণে বর্ণনা করা হয়েছে।
✸একদিন মহারাজ যুধিষ্ঠির ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জিজ্ঞাসা করলেন– “হে কৃষ্ণ! হে অচ্যুতানন্দ! আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, এই ব্রতের মাহাত্ম্য কি, ব্রত পালন বিধিই বা কি, তা কৃপা করে আমাকে বলুন। আমি তা শ্রবন করতে ব্যকুল।”
✸ যুধিষ্ঠির মহারাজের জানার ব্যকুলতা দেখে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রসন্ন হয়ে বলতে শুরু করলেন — “হে রাজন! এখন আমি সেই পবিত্র ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, মনোযোগ দিয়ে তা শ্রবন করুন।
আশ্বিন মাসের একাদশী ‘ইন্দিরা’ নামে পরিচিত। এই ব্রত পালনে মহাপাপ বিনষ্ট হয়। এমনকি কর্মবিপাকে যারা নিম্নযোনি লাভ করেছেন, সেই পূর্বপুরুষদেরও উত্তম গতি লাভ হয়। এই একাদশীর মাহাত্ম্য শোনামাত্রেই সামবেদীয় যজ্ঞ ফল লাভ করা যায়।
❖ রাজা ইন্দ্রসেনের কাহিনী ❖
✸ হে রাজেন্দ্র! প্রাচীন কালে মাহিস্মতি নগরে ইন্দ্রসেন নামে এক প্রসিদ্ধ রাজা রাজত্ব করতেন। ধর্ম বিধি অনুসারে রাজ্য পালন করার কারনে তিনি বিশেষ খ্যাতি সম্পন্ন ছিলেন। বিপুল ধনসম্পত্তির অধিকারী ছিলেন তিনি। পুত্র পৌত্রাদিসহ তিনি সুখে রাজ্য পরিচালনা করতেন। বিষ্ণু ভক্তি পরায়ন সেই রাজা নিরন্তর শ্রী গোবিন্দ নাম গানে মগ্ন থাকতেন।
✸ একদিন রাজা সুখে রাজসভায় বসে আছেন। এমন সময় দেবর্ষি নারদ স্বর্গ থেকে সেখানে উপস্থিত হলেন। তাঁকে দর্শন করে রাজা হাত জোড় করে উঠে দাঁড়ালেন। দন্ডবৎ প্রণাম সেরে যথাযথ মর্যাদা সহকারে নারদ মুনিকে আসন, পাদ্য, অর্ঘ্য আদি ষোড়শোপচারে পূজা নিবেদন করলেন।
✸ তারপর রাজা ইন্দ্রসেন বিনীত সুরে বললেন—“হে মুনিবর! আপনার দর্শন মাত্রই আমার যাবতীয় যজ্ঞ ফল লাভ হয়েছে। এখন আপনার আগমনের কারণ জানিয়ে আমাকে কৃতার্থ করুন।”
✸ দেবর্ষি নারদ প্রত্যুত্তরে বললেন—“হে মহারাজ! অতি বিস্ময়কর একটি কথা শ্রবণ করুন। আমি এক সময় যমলোকে গিয়েছিলাম। সেখানে যমরাজের রাজসভায় বহু পুণ্যের অধিকারী আপনার পিতাকে দেখলাম। ব্রত ভঙ্গের পাপে তাকে সেখানে যেতে হয়েছে। হে রাজন! আপনার পিতা যে সংবাদ প্রেরণ করেছেন, আমি এখন তা আপনাকে বর্ণন করছি।
আপনার পিতা আমাকে জানিয়েছিলেন— ‘হে ঋষিবর! মাহিস্মতির রাজা ইন্দ্রসেন হল আমার পুত্র। তাকে অনুগ্রহ করে বলবেন যে, আমি বহু পুণ্য কর্ম, অনুষ্ঠান, দান ধ্যান করলেও কোনো কারণবশত যমালয়ে আসতে বাধ্য হয়েছি। আপনি কৃপা করে তাকে বলবেন ভয় সর্বপাপ নাশক ইন্দিরা একাদশী অবশ্যই পালন করতে। সেই ব্রতের প্রভাবে আমি নিষ্পাপ হয়ে স্বর্গলোকে যেতে পারবো।’ এই কথা জানাবার উদ্দেশ্যেই আমার আগমন। হে রাজন! আপনার পিতার মঙ্গল বিধানে আপনি যথাবিধি ইন্দিরা একাদশী পালন করুন।”
✸ এরপর রাজা ইন্দ্রসেন ব্যাকুল স্বরে জিজ্ঞাসা করলেন—“হে দেবর্ষি! সেই ইন্দিরা একাদশীর বিধি কি, কোন তিথি বা কোন পক্ষে এই ব্রত পালন করা কর্তব্য তা কৃপা করে আমাকে বলুন।”
✸ দেবর্ষি প্রসন্ন চিত্তে উত্তর দিলেন— “হে মহারাজ! আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের দশমীর দিনে শ্রদ্ধা সহকারে প্রাতঃস্নান করবেন, মধ্যাহ্নে ভক্তি ভাবাপন্ন হয়ে পুনরায় স্নান করবেন এবং রাত্রি কালে ভূমিতে শয়ন করবেন।
পরদিন একাদশীতে প্রাতঃকৃত্যাদি সমাপণ করে নিরাহারে থাকবেন। ব্রতের নিয়মাবলী দৃঢ়ভাবে পালন করবেন। ‘হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যুত! আপনার শরণাগতের প্রতি কৃপা করুন’— এই ভাবে বলতে বলতে শ্রদ্ধাশীল মনোভাব সহকারে শালগ্রাম পূজা করে পিতার উদ্দেশ্যে ব্রতের ফল অর্পণ করবেন।
দ্বাদশীর দিন সকালে ভক্তিচিত্তে শ্রী গোবিন্দের পূজা করে ব্রাহ্মণ ভোজন করিয়ে অবশেষে নিজে মহাপ্রসাদ গ্রহণ করবেন।
হে রাজন! বিধি অনুসারে শ্রী হরি এবং ভক্তদের অর্চন করলে আপনার পিতৃবর্গ মুক্তিলাভ করে শীঘ্রই বৈকুণ্ঠে গমন করবেন। রাজা ইন্দ্রসেনকে এই উপদেশ দিয়ে দেবর্ষি নারদ প্রস্থান করলেন।
✸ রাজা ইন্দ্রসেন মুনির উপদেশ অনুসারে পুত্র-পরিজনসহ ভক্তি সহকারে এই ব্রতের অনুষ্ঠান করলেন। তখন দেবলোক থেকে পুষ্প বৃষ্টি হতে লাগল এবং তার পিতাও বিষ্ণুলোকে গমন করলেন।
✸ তারপর রাজা ইন্দ্রসেন নিজপুত্রকে রাজ্য ভার অর্পণ করে নিজেও বিষ্ণুলোকে ফিরে গেলেন। এই ইন্দিরা একাদশীর মাহাত্ম্য পাঠ ও শ্রবণে মানুষ সকল পাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোক প্রাপ্ত হয়।
🌸 জয় ইন্দিরা একাদশী 🌸
🌸 জয় শ্রীরাধাকৃষ্ণ 🌸
━━━━━━◆❃◆━━━━━━
❖ শ্রীহরি বাসরে হরি কীর্তন বিধান ❖
ভক্তগণ এই হরিবাসর তিথিতে শ্রীভগবানের নাম, রূপ, গুণ, লীলা ও পরিকরাদি স্মরণ- কীর্তনাদি ভক্তির অঙ্গগুলি অহর্নিশ সময় পালন করিয়া দিনটি অতিবাহিত করেন।
তাই সাধু -গুরু- বৈষ্ণবগণের সঙ্গে শ্রীকৃষ্ণের পূজা- অর্চনাদি, শ্রীমৎ ভাগবত পাঠ, শ্রীহরিনাম- সংকীর্তন ও শ্রীভগবৎ কথা আলোচনার মধ্যে থাকিয়া শ্রীহরি বাসর পালন করা প্রতিটি মানুষের কর্তব্য। এই সকল পালন করিলে হৃদয়ের পাপ রাশি নষ্ট হয়, ভগবৎ চরণে স্থান লাভ ঘটে।
❖ প্রনিপাত ❖
✸ সদা সর্বদা শ্রী শ্রী রাধা ও কৃষ্ণের পাদপদ্মের কথা স্মরণ করুন, তাহলে শ্রীকৃষ্ণের দ্বারা আপনার জন্য বরাদ্দকৃত কার্য সম্পাদন করতে কোনও অসুবিধা অনুভব করতে হবে না।
✸ জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্রীকৃষ্ণের কৃপার প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও ভরসা রাখতে হবে।
✸ শ্রীকৃষ্ণের পবিত্র নামটিতে অসাধারণ আধ্যাত্মিক শক্তি রয়েছে কারণ শ্রীকৃষ্ণের নাম স্বয়ং শ্রীকৃষ্ণের থেকে আলাদা নয় ….
✸ঐকান্তিক ভালবাসা এবং নিষ্ঠার সাথে এই নামগুলি জপ করুন তবেই আপনি চিণ্ময় আনন্দ অনুভব করবেন:
হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।। … (১০৮ বার)
হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। ___শ্রীল প্রভুপাদ!
► আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী
You must be logged in to post a comment.