Rama Ekadashi রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ মন্ত্র_1

Rama Ekadashi || রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ মন্ত্র

1 min


215
184 shares, 215 points

এই অধ্যায়ে আমরা আলোচনা করেছি রমা একাদশী (Rama Ekadashi) মাহাত্ম্য, সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত, সংকল্প মন্ত্র, পারণ মন্ত্র।

সেই সঙ্গে বিশেষভাবে আলোচনা করেছি রমা একাদশী ব্রত (Rama Ekadashi Vrat) পালনের উদ্দেশ্য কি?

রমা একাদশী ব্রত পালনের উদ্দেশ্য কী ?

১) এই একাদশী মহাপাপনাশিনী। অর্থাৎ বিধি অনুসারে রমা একাদশী ব্রত পালনে সর্বপাপক্ষয় হয় এবং সুখ ও সৌভাগ্য প্রাপ্তি ঘটে।

২) যে ব্যাক্তি রমা একাদশী ব্রত শ্রবণ করেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণুলোকে পূজিত হন।

রমা একাদশী সময়সূচী ও পারন মুহূর্ত 

যারা আমিষ আহার করেন, তারা একাদশীর আগের দিন অর্থাৎ দশমী, একাদশী এবং দ্বাদশী এই তিন দিন নিরামিষ আহার করবেন।

দশমীতে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে ফুল নিবেদন করে সঙ্কল্প করবেন, হে ভগবান! আমাকে কৃপা করুন যাতে আগামীকাল একাদশী যেন নিষ্ঠার সাথে পালন করতে পারি।

❏ ইংরাজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ০৯ নভেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার রমা একাদশী।

❏ বাংলা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ২২ কার্তিক ১৪৩০

ভোরে স্নান সেরে ভগবানের সম্মুখে সঙ্কল্প মন্ত্র পাঠ করবেন।

পারণ : রমা একাদশীর রদিন অর্থাৎ শুক্রবার সকালে পারণ সম্পন্ন করতে হবে।

❏ সকাল ০৬:০৯ থেকে ০৯:৫১ মিনিটের মধ্যে ঢাকা, বাংলাদেশ সময় এবং

❏ সকাল ০৫:৪৮ থেকে ০৯:৩১ মিনিটের মধ্যে কলকাতা, ভারতীয় সময়।

ভোরে স্নান সেরে পারন মন্ত্র পাঠ করে একাদশীর ফল ভগবানের নিকট অবশ্যই অর্পণ করবেন, নচেৎ পূর্ণ একাদশীর ফল লাভ থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন।

রমা একাদশী সংকল্প মন্ত্র 

একাদশীর দিন ভগবান কৃষ্ণের সম্মুখে আমরা অবশ্যই সংকল্প নেব –

একাদশ্যাম্‌ নিরাহারঃ স্থিতা অহম্ অপরেহহনি।

ভোক্ষ্যামি পুন্ডরীকাক্ষ স্মরনম্‌ মে ভবাচ্যুত।।

অনুবাদ :  হে পুন্ডরীকাক্ষ! হে অচ্যূত! একাদশীর দিন উপবাস থেকে এই ব্রত পালনের উদ্দেশ্যে আমি আপনার স্মরণাপন্ন হচ্ছি।

রমা একাদশী পারন মন্ত্র 

একাদশী তিথির পরদিন উপবাস ব্রত ভাঙার পর অর্থাৎ, উপবাসের পরদিন সকালে যে নির্দিষ্ট সময় দেওয়া থাকে, সেই সময়ের মধ্যে পঞ্চ রবিশস্য ভগবানকে ভোগ নিবেদন করে একাদশীর পারণ মন্ত্র তিনবার ভক্তিভরে পাঠ করতে হয়। এরপর প্রসাদ গ্রহণ করে পারণ করা একান্ত ভাবে দরকার, নতুবা একাদশীর পূর্ণ ফল লাভ হবে না। আর অবশ্যই একাদশীর আগের দিন ও পরের দিন নিরামিষ প্রসাদ গ্রহণ করতে হবে। 

একাদশীর পারণ মন্ত্রঃ —

ওঁ অজ্ঞান তিমিরান্ধস্য ব্রতেনানেন কেশব।

প্রসীদ সুমুখ নাথ জ্ঞানদৃষ্টিপ্রদো ভব॥

—- (বৃ: না: পু: ২১/২০)

অনুবাদ :  হে কেশব! আমি অজ্ঞানরূপ অন্ধকারে নিমজ্জিত আছি। হে নাথ! এই ব্রত দ্বারা আমার প্রতি প্রসন্ন হয়ে আমাকে জ্ঞানচক্ষু প্রদান করুন।

এছাড়াও আরও জানুন – একাদশী ব্রত কেন করা উচিত? একাদশীর আবির্ভাব কীভাবে হয়েছিল ? শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী। একাদশীতে কি আহার গ্রহণ করবেন? সব কিছু জানতে

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী

Rama Ekadashi রমা একাদশী মাহাত্ম্য, সংকল্প ও পারণ মন্ত্র_2

রমা একাদশী (Rama Ekadashi) মাহাত্ম্য কথা

কার্তিক মাসে যুধিষ্ঠির মহারাজ ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে অনুরোধ করলেন— “হে অচ্যুত! হে পরমেশ্বর! কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষের একাদশীর নাম কি, এই একাদশীর মাহাত্ম্যই বা কি কৃপা করে আমায় বলুন। আমি তা জানতে আগ্রহী।”

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মাধুর্যময় মুখে প্রসন্নতা বিকশিত হল এবং বললেন— “হে সার্বভৌম! হে জ্যৈষ্ঠকৌন্তেয়! মহাপাপনাশিনী এই একাদশী ‘রমা’ নামে প্রসিদ্ধ। এখন আমি এই ব্রত মাহাত্ম্য বর্ণনা করছি, আপনি তা মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করুন।

অতীতে মুচুকুন্দ নামে এক সুপ্রসিদ্ধ তেজস্বী রাজা ছিলেন। দেবরাজ ইন্দ্র, যম, বরুণ ও ধনপতি কুবেরের সাথে তার বন্ধুত্ব ছিল। ভক্তশ্রেষ্ঠ বিভীষণের সাথেও তার অত্যন্ত সদ্ভাব ছিল। তিনি ছিলেন বিষ্ণুভক্ত ও সত্যপতিজ্ঞ। ধর্ম অনুসারে তিনি রাজ্যশাসন করতেন।চন্দ্রভাগা নামে তার এক সুশ্রী কন্যা ছিল। চন্দসেনের পুত্র শোভনের সাথে তার বিবাহ সম্পন্ন হয়।

বিয়ে পরবর্তীতে শোভন একদিন শ্বশুর বাড়িতে আসে এবং দৈবক্রমে সেইদিন ছিল একাদশী তিথি। স্বামীকে দেখে পতিপরায়ণা চন্দ্রভাগা বেশ চিন্তিত হয়ে ভাবতে লাগল — ‘হে ভগবান! আমার স্বামী অত্যন্ত দুর্বল, তিনি ক্ষুধা একদম সহ্য করতে পারেন না। এখানে আমার পিতার শাসন খুবই কঠোর। দশমীর দিন তিনি নাগরা বাজিয়ে রাজ্যে ইতিমধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন যে, একাদশী দিনে আহার নিষিদ্ধ। আমি এখন কি করি!’

রাজার নিষেধাজ্ঞা শুনে বিচলিত শোভন তার প্রিয়তমা পত্নীর সাথে পরামর্শ করলেন— ‘হে প্রিয়ে, এখন আমার কি কর্তব্য, তা আমাকে বলো।’

উত্তরে রাজকন্যা বলল— ‘হে পতিদেব, আজ শুধু এই রাজপ্রাসাদে নয়, রাজ্যের কেউই আহার করবে না। মানুষের কথা তো দূরে থাক, পশুরা পর্যন্ত অন্নজল মাত্র গ্রহণ করবে না। হে নাথ, যদি তুমি এ থেকে নিষ্কৃতি চাও তবে নিজগৃহে প্রত্যাবর্তন করাই ঠিক হবে। এখানে আহার করলে তুমি সকলের নিন্দাভাজন হবে এবং আমার পিতাও অত্যন্ত রাগান্বিত হবেন। এখন বিশেষভাবে বিচার করে যা ভাল মনে তাই কর।’

সাধ্বী স্ত্রীর পরামর্শ শুনে শোভন চিন্তিত হয়ে বলল— ‘হে প্রিয়ে! তুমি ঠিকই বলেছ। কিন্তু আমি গৃহে যাব না। এখানে থেকে একাদশী ব্রত পালন করব। তারপর দেখা যাক, ভাগ্যে যা লেখা আছে তা অবশ্যই ঘটবে।’

মনে শক্তি সঞ্চয় করে শোভন একাদশী ব্রত পালনে বদ্ধপরিকর হলেন। সমস্ত দিন অতিক্রান্ত হয়ে রাত্রি শুরু হল। বৈষ্ণবদের কাছে রাত্রিযাপন অত্যন্ত আনন্দকর। কিন্তু শোভনের পক্ষে তা ছিল বড়ই যন্ত্রণাদায়ক। সারাদিন কোনভাবে অতিক্রান্ত হলেও রাতের দিকে ক্ষুধা-তৃষ্ণায় সে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়েছিল। রাত যত বাড়ে শারীরিক অবনতি হতে থাকে এবং রাত্রি শেষে সূর্যোদয়কালে তার মৃত্যু হয়। রাজা মুচুকুন্দ এতে  অত্যন্ত দুঃখিত হল এবং যথাযথ নিয়মনিষ্ঠার সাথে তার শবদাহকার্য সুসম্পন্ন করলেন। শোকে দুঃখে চন্দ্রভাগা ভেঙ্গে পড়ল এবং স্বামীর অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সমাপ্ত করে পিতার আদেশে পিতৃগৃহেই বাস করতে লাগল।

এইদিকে রমা একাদশী ব্রতের প্রভাবে শোভনের মন্দরাচল শিখরে অনুপম সৌন্দর্যবিশিষ্ট এক সুশোভিত দেবপুরী প্রাপ্ত হল। একসময় মুচুকুন্দপুরের সোমশর্ম্মা নামক এক ব্রাহ্মণ তীর্থভ্রমণ করতে করতে সেখানে উপস্থিত হলেন। সেখানে রত্নমণ্ডিত বিচিত্র স্ফটিকখচিত সিংহাসনে রত্নলঙ্কারে ভূষিত রাজা শোভনকে তিনি দেখতে পেলেন। সেখানে গন্ধর্ব ও অপ্সরাগণ নানা উপচারে তাকে পূজা করছিল। তিনি ব্রাহ্মণকে দেখে চিনতে পারলেন এবং রাজা মুচুকুন্দের জামাতারূপে আসন থেকে উঠে এসে তার চরণ বন্দনা করলেন। শ্বশুর মুচুকুন্দ ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা সহ নগরবাসী সকলের কুশলবার্তা জিজ্ঞাসা করলেন। ব্রাহ্মণ সকলের কুশল সংবাদ জানালেন। সেই সঙ্গে তিনি  জিজ্ঞাসা করলেন— ‘এমন বিচিত্র মনোরম স্থান কেউ কখনও দেখেনি। আপনি কিভাবে এই স্থান প্রাপ্ত করলেন, তা সবিস্তারে আমাকে বর্ণনা করুন।’

শোভন ব্রাহ্মণকে আসনে বসতে দিয়ে নিজ স্থান অধিকার করলেন এবং সমস্ত ঘটনাটি বলতে শুরু করলেন— ‘কার্তিক মাসের কৃষ্ণপক্ষীয়া রমা একাদশী সর্বব্রতের মধ্যে শ্রেষ্ঠ। আমি তা ভক্তি ও শ্রদ্ধাপূর্ণভাবে পালন করার সুকৃতি হিসাবে এই আশ্চর্যজনক পুণ্যফল লাভ করেছি। আপনি কৃপা করে চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানাবেন।’

প্রসন্ন হয়ে সোমশর্ম্মা মুচুকুন্দপুরে ফিরে এসে চন্দ্রভাগাকে সমস্ত ঘটনা জানালেন। ব্রাহ্মণের কথা শুনে চন্দ্রভাগা অত্যন্ত আনন্দিত হয়ে বললেন— ‘হে ব্রাহ্মণ! আমি নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছি না, আপনার কথা আমার কাছে স্বপ্ন বলে মনে হচ্ছে।’  

তখন সোমশর্ম্মা বললেন— ‘হে পুত্রী, সেখানে তোমার স্বামীকে আমি স্বয়ং সচক্ষে দেখেছি। অগ্নিদেবের মতো সুশোভিত দীপ্তিমান তার নগরও দর্শন করেছি।  কিন্তু তার নগর স্থির নয়, তা যাতে স্থির করা যায় সেই মতো কোন উপায় বের কর।’

এসব কথা শুনে চন্দ্রভাগা উচ্ছ্বসিত হয়ে বললেন— ‘হে ব্রাহ্মণ! পতিদেবকে দেখতে আমার একান্ত ইচ্ছা হচ্ছে। আমাকে এখনই তার কাছে নিয়ে চলুন। আমি ব্রত পালনের পুণ্যফলে এই নগরকে স্থির করে দেব।’

তখন সোমশর্ম্মা চন্দ্রভাগাকে নিয়ে মন্দার পর্বতে বামদেবের আশ্রমে উপস্থিত হলেন। সেখানে ঋষির কৃপায় ও হরিবাসর ব্রত পালনের পুণ্যফলে চন্দ্রভাগা দিব্য শরীর লাভ করল। দিব্য গতি লাভ করে নিজ স্বামীর কাছে উপস্থিত হলেন। প্রিয় পত্নীকে এখানে দেখে শোভন কেবল অত্যাশ্চর্য হলেন তাই নয়, সাথে ভীষণ আনন্দিত হলেন।

বহুদিন পর স্বামীর সঙ্গ লাভ করে চন্দ্রভাগা অকপটে নিজের পুণ্যকথা জানালেন— ‘হে প্রিয়, আজ থেকে আট বছর আগে আমি যখন পিতৃগৃহে ছিলাম তখন থেকেই এই রমা একাদশীর ব্রত নিষ্ঠাসহকারে পালন করতাম। ঐ ব্রতের পুণ্য প্রভাবে এই নগর স্থির হবে এবং তা মহাপ্রলয় পর্যন্ত থাকবে।’

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন— ‘হে রাজন! মন্দরাচল পর্বতের শিখরে শোভন ও স্ত্রী চন্দ্রভাগা দিব্যসুখে জীবন অতিবাহিত করতে লাগলেন।’

পাপনাশিনী ও ভক্তিমুক্তি প্রদায়িনী রমা একদশীর মাহাত্ম্য আমি আপনার কাছে বর্ণনা করলাম। যিনি এই একাদশী ব্রত শ্রবণ করবেন, তিনি সর্বপাপ মুক্ত হয়ে বিষ্ণলোকে পূজিত হবেন।”

হরে কৃষ্ণ, হরে কৃষ্ণ, কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে ।
হরে রাম, হরে রাম, রাম রাম হরে হরে ।।

হরে কৃষ্ণ মহামন্ত্র জপ করুন সুখী হোন। _____শ্রীল প্রভুপাদ!

Read-More_4

আরও পড়ুন: একাদশী ব্রত মাহাত্ম্য ও শুদ্ধভাবে একাদশী পালনের নিয়মাবলী


Like it? Share with your friends!

215
184 shares, 215 points

Join Our Community List

Community grow with You. * VERIFY & CONFIRM YOUR EMAIL *

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Fill the Correct Information.

Thanks for your interest joining to Bangla Kobita Club community.

Something went wrong.

Subscribe to Join Our Community List

Community grow with You. [Verify and Confirm your Email]